কোনো কোনো মহৎ দিন একটি জাতির জীবনে নিয়ে আসে যুগান্তরের সম্ভাবনা। তেমনি একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি – বাংলা ভাষা ও বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠার দিন, বাঙালির মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন। ১৯৫২ সালের স্মৃতিময় এই দিনটি রক্তাক্ত ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর। এই আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করে ছাত্রজনতা। এই শহীদ মিনার একুশের শোক, সংগ্রাম আর শপথের প্রতীক।
১৯৫২ সালের শুরুতে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষাপটে একুশে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা দিবস’ পালন এবং সাধারণ ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়। স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলন দমন করার জন্য পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে এবং সব ধরনের জনসভা, মিছিল নিষিদ্ধ করে দেয়। প্রবল প্রতিবাদে ফেটে পড়ে ছাত্ররা।
১৪৪ ধারা ভেঙে তারা মিছিল বের করে। বাঙালির দাবি ছিল, সকল মাতৃভাষাই সমান মর্যাদার অধিকারী। তাই উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে হবে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির দাবি নস্যাৎ করার জন্যে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার মিছিলে গুলি চালায়। রাজপথে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার সহ আরো অনেকে।
এর ফলে আন্দোলন আরো ব্যাপক ও তীব্র হয়ে ওঠে। সারা পূর্ববাংলা ফেটে পড়ে বিক্ষোভে। বাইশে ফেব্রুয়ারি সারারাত জেগে মিছিলে নিহতদের উদ্দেশ্যে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ করে ছাত্ররা। তেইশে ফেব্রুয়ারি ভোরে শেষ হয় শহীদ মিনার তৈরির কাজ। শহীদদের স্মরণে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে নির্মিত এটিই প্রথম শহীদ মিনার। সেদিনই বর্বর পুলিশ তা ভেঙে ফেলে। ইটের তৈরি মিনার ভাঙলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ভাঙতে পারেনি বাঙালির দৃঢ় মনোবল। আবার গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। এই ঘটনারই মহত্তম প্রকাশ লক্ষ করা যায় আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘একুশের কবিতা’য়। তিনি লিখেছেন:
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো
চারকোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো।…’