চট্টগ্রাম ওয়াসার ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানো পাইলট প্রকল্পে ধরা পড়েছে নানা ত্রুটি। প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর পর সফলতা পাওয়া গেলে পরবর্তীতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ নগরীর গ্রাহকদের স্মার্ট মিটারের আওতায় কথা বলেছিল। এই লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে নগরীর চান্দগাঁও জোনে ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানো শুরু করেছিল ওয়াসা। চান্দগাঁও এলাকায় বসানো একাধিক মিটারে মাস শেষে বিলিং সিস্টেমে নানা ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে।
ওয়াসার স্মার্ট মিটার বসানোর কাজটি মূলত ওয়াসার সিস্টেম এনালিস্ট শফিকুল বাশার দেখতেন। ওয়াসার এই প্রকল্পসহ একাধিক প্রকল্পের অনিয়ম–দুর্নীতির বিষয়ে পত্রিকায় লেখালেখি হলে গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি তদন্ত দল দুদিনব্যাপী ওয়াসার নানা প্রকল্পের অনিয়ম তদন্তে আসে। ওই সময় এই প্রকল্পের ফাইলপত্র নিয়ে তদন্ত টিমের মুখোমুখি হয়েছিলেন স্মার্ট মিটার প্রকল্পের পরিচালক ও সিস্টেম এনালিস্ট শফিকুল বাশার। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের তদন্তের মধ্যেই তিনি এক বছরের শিক্ষা ছুটি নিয়ে দুবাই চলে যান। তিনি দুবাই যাওয়ার পর ওয়াসা কর্তৃপক্ষ তার স্ত্রী ওয়াসার একই বিভাগের কম্পিউটার প্রোগ্রামার লুৎফি জাহানকে এই প্রকল্পের মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়। তার নেতৃত্বে ওয়াসার ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে।
স্মার্ট মিটার প্রকল্পের ব্যাপারে জানার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রামার লুৎফি জাহানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম ওয়াসা ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীতে স্মার্ট মিটার বসানোর পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। জানা গেছে, আমেরিকার যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছে তাদের লোকাল এজেন্ট পদ্মা স্মার্ট টেকনোলজি এই মিটারগুলো বসানোর কাজ করেছে।
মিটারগুলো বসানোর আগে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, স্মার্ট মিটারগুলো যেসব এলাকায় বসানো হবে ওইসব এলাকায় ওয়াসার পানির মিটারে আর কোনো মিটার রিডার লাগবে না। হিউম্যান টাচ ছাড়াই মিটারের রিডিং অটো চলে আসবে ওয়াসার সেন্ট্রাল সার্ভারে। এটা চালু হয়ে গেলে পানি চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। পানির অপচয়ও কমবে; যা বিশ্ব মান অনুযায়ী হবে।
মিটার রিডারদের কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে মিটার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওয়াসার বাণিজ্যিক বিভাগের কর্মকর্তারা।
স্মার্ট মিটারের বিলিংয়ের ক্ষেত্রে সফলতার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রুমন দে বলেন, স্মার্ট মিটারে বিলিংয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা ত্রুটি ধরা পড়েছে। এই বিষয়গুলো আমরা নোট আকারে বাণিজ্যিক বিভাগকে জানাব। তবে চলতি অর্থবছরে ওয়াসার রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি ওয়াসার সিস্টেম লস ৩৫ শতাংশ থেকে কমে গত মাসে ২২ শতাংশে কমে এসেছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের শুরুর দিকে লোরা গেটওয়েভিত্তিক ৫টি স্মার্ট মিটার পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়। নগরীর লালখানবাজার এলাকার হাই লেভেল রোড ও বাঘঘোনায় বসানো হয় এসব পরীক্ষামূলক মিটার। ব্যবহারে এসব মিটারের কার্যকারিতার সফলতা পেয়ে এই পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মিটারগুলো বসানোর আগে পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হলে বুয়েট থেকে পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর চট্টগ্রাম ওয়াসা পাইলট প্রকল্পটি গ্রহণ করে।