পটিয়ার আ ন ম সেলিম উদ্দিন চৌধুরী (৪৮) প্রকাশ ভুট্টো নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, চাঁদাবাজি এবং বিস্ফোরক মামলাসহ আটটি মামলা রয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ দল মহাসড়কের ইন্দ্রপুল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি উপজেলার শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হিলচিয়া গ্রামের মৃত আহমদ নবীর পুত্র।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় পটিয়া থানায় ৮টি নিয়মিত মামলাসহ প্রায় ১০টি অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণার উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তার নিজ গ্রামে তিনি ভুট্টো নামে পরিচিত হলেও আওয়ামী লীগের প্রভাব দেখিয়ে আ ন ম সেলিম উদ্দিন চৌধুরী, কখনো সেলিম উদ্দিন নাম ব্যবহার করে প্রতারণা চালিয়ে আসছেন। ফলে তার সঠিক নাম নির্ধারণ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তিনি কখনো আওয়ামী লীগ নেতা, কখনো সাংবাদিক, কখনো ঠিকাদার হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে আসছিলেন।
শোভনদন্ডী ইউনিয়নের হাতিয়ার ঘোনা এলাকায় কাজী এবাদুল্লাহ শাহ জামে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার হামলা, গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এলাকার অনেক নিরীহ লোককে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিলেন তিনি।
৪ আগস্ট পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে ছাত্র–জনতার ওপর হামলা, ভাঙচুর ও গুলি চালানোসহ সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া ইউসিবিএল ব্যাংক পটিয়া শাখা থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার ঋণ নেন সেলিম। উক্ত টাকা আত্মসাৎ করায় তিনি বর্তমানে ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় রয়েছেন।
হাটহাজারী উপজেলার সৈয়দ মোরশেদুল আলম নামে এক ঠিকাদার জানান, আ ন ম সেলিম একজন বড় মাপের প্রতারক। ফটিকছড়িতে তার ঠিকাদারি লাইসেন্সে কাজ পান; যেখানে আমরা ইনভেস্টমেন্ট করি। কিন্তু তিনি আমাদের না জানিয়ে বিল তুলে ৭৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ নিয়ে আমি আদালতে মামলা করেছি। তিনি আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। টাকা চাইলে আমাকে পটিয়ার সাবেক এমপি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল আলম দিদার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা বদিউল আলমের প্রভাব দেখিয়ে হুমকি দিতেন।
চট্টগ্রাম নগরীর লালদিঘি পাড়ে জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানের সাথে পাথর ব্যবসা করে ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে পাচলাইশ থানাধীন সিএমএম কোর্টে মামলা হয়। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শেষে সেলিম উদ্দিনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে।
জানা যায়, আসাদুজ্জামানের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসাইন অ্যান্ড ব্রাদার্সের সাথে সেলিম উদ্দিনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যান্স ট্রেডার্স যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আওতায় সেলিম উদ্দিন ঠিকাদারি ব্যবসা করেন। এ ব্যবসার প্রায় ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন সেলিম।
পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নুর বলেন, আ ন ম সেলিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চাঁদাবাজি এবং বিস্ফোরক মামলাসহ ৮ মামলা রয়েছে। তাকে আটক করার পর জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মামলা ও হত্যা চেষ্টাসহ চারটি মামলা রুজু করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামীকাল (আজ) তাকে পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হবে।