একাত্তরের কণ্ঠসৈনিক সুজেয় শ্যাম আর নেই

আজাদী ডেস্ক | শনিবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের গানের কথায়সুরে মুক্তিকামী মানুষেরা হতেন উদ্দীপ্ত, তাদেরই একজন একাত্তরের কণ্ঠসৈনিক সুজেয় শ্যাম আর নেই। ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে এই সংগীত পরিচালক ও সুরকার মারা গেছেন বলে তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় বাসাবোর সবুজবাগে বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে। সেখানেই গতকাল দুপুরে সুজেয় শ্যামের মরদেহ সৎকার সম্পন্ন হয় বলে জানান তার মেয়ে লিজা। একাত্তরে সহযোদ্ধা, সহশিল্পী আর স্বজনদের শ্রদ্ধার ফুল এবং রাষ্ট্রীয় সম্মানে সিক্ত হয়ে চিরবিদায় নিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী সুজেয় শ্যাম। শরীরে ক্যান্সার নিয়েই কাটছিল সুজেয় শ্যামের দিন, সঙ্গে ডায়েবেটিস, কিডনিসহ নানা জটিল রোগও ছিল। গত জুন মাসেও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের এই শিল্পী। গত সেপ্টেম্বর তার হার্টে পেসমেকার বসানোর পর ইনফেকশন হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন লিজা।

১৯৪৬ সালে সিলেটে জন্ম নেওয়া সুজেয় শ্যামকে সংগীতে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। তার আগে ২০১৫ সালে শিল্পকলা পদক পান তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে সুজেয় শ্যামের নাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নয়টি গানে সুর করেছিলেন সুজেয় শ্যাম, যেগুলো একাত্তরের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রয়েছে ‘মুক্তির একই পথ সংগ্রাম’, ‘ওরে শোনরে তোরা শোন’, ‘রক্ত চাই রক্ত চাই’, ‘আজ রণ সাজে বাজিয়ে বিষাণ’, ‘আহা ধন্য আমার’,‘আয়রে চাষী মজুর কুলী’। তার সুর করা গানের মধ্যে ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি’ এবং ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গান দুটি বাংলাদেশের যে কোনো জাতীয় দিবসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, তখনই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সুরকার ও সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যামকে বলা হল, বিজয়ের গান করতে। এরপর শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই/ খুশির হাওয়ায় উড়ছে/ উড়ছে উড়ছে উড়ছে/ বাংলার ঘরে ঘরে’ গানটিতে সুর করেন সুজেয় শ্যাম। মাত্র ১৫ মিনিট লেগেছিল গানটি লেখা ও সুর করতে, এরপর রেকর্ডিং। আর পুরো গানটার জন্ম হয়েছিল মাত্র এক ঘণ্টায়। গিটার বাদক ও শিশুতোষ গানের পরিচালক হিসেবে ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান চট্টগ্রাম বেতারে কর্মজীবন শুরু হয় সুজেয় শ্যামের। পরে তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। ১৯৬৯ সালে চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন সুজেয় শ্যাম। ঢাকাই চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনবার শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক হিসেবে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। বাংলাদেশ বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক পদ থেকে ২০০১ সালে অবসরে যান সুজেয় শ্যাম। ২০০৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ৪৬টি গানের সংকলন নিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতারের গান’ শিরোনামে একটি অ্যালবামের সংগীত পরিচালনা করেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাইট নির্ধারণে জটিলতা,শীঘ্রই চলছে না ফেরি
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে অসহায় ৬০ পরিবারের মাঝে মাসিক ১ হাজার টাকা চিকিৎসা ভাতা প্রদান