নগরী আকবর শাহ থানাধীন শাপলা আবাসিক এলাকার লইট্টা গোনা নামক স্থানে দিনে রাতে পাহাড় কাটা হচ্ছে। প্রায় একশ ফুট উঁচু একটি পাহাড়ের অর্ধেকেরও বেশি অংশ ইতোমধ্যে সাবাড় করে ফেলা হয়েছে। জনৈক আবদুল মালেকের মালিকানাধীন এই পাহাড়টি গত বেশ কিছুদিন ধরে কাটা হচ্ছে বলে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেছেন, পাহাড় কাটার পাশাপাশি পাহাড়ে ধস সৃষ্টির জন্য মোটর লাগিয়ে রাতে দিনে পানি দেয়া হচ্ছে।
রাতে–দিনে কাটা হচ্ছে পাহাড়। আগে লুকোচুরি করে পাহাড় কাটা হলেও এখন প্রকাশ্যে কেটে ফেলা হচ্ছে। পাহাড়খেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে শঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে পাহাড়খেকোরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো সাবাড় হওয়ার শঙ্কা দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার মহোৎসব থামেনি। দিন কয়েক বন্ধ থাকলেও নতুন করে শুরু হয়েছে পাহাড় কাটা। ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোডের সন্নিহিত এলাকার পাহাড়গুলো অনেকদিন ধরে কাটা হচ্ছে। প্রভাবশালী একটি চক্র ফৌজদারহাট–বায়েজিদ লিংক রোড থেকে আড়াআড়িভাবে ভাটিয়ারী–বড়দীঘির পাড় লিংক রোড পর্যন্ত একটি রাস্তা করার জন্য পাহাড় কাটছে বেশ কিছুদিন ধরে। পাহাড় কাটার ব্যাপারে দৈনিক আজাদীতে বিস্তারিত সংবাদ প্রকাশের পর দিন দুয়েক বন্ধ ছিল অপতৎপরতা। পরিবেশ অধিদপ্তর বায়েজিদ বোস্তামী থানায় গিয়ে মামলা করেছিল। কিন্তু এরপর আর কিছু হয়নি। পাহাড়খেকো চক্রটি নতুন উদ্যমে পাহাড় কাটা শুরু করে।
চট্টগ্রামের প্রভাবশালী একটি চক্র এখানে রাতে–দিনে পাহাড় কাটছে। বায়েজিদ বোস্তামী থানায় রেকর্ডকৃত মামলায় অভিযুক্ত পাহাড়খেকোরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। উক্ত এলাকায় নতুন করে পাহাড়কাটা শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে স্থানীয় সূত্র বলেছে, প্রভাবশালী একটি চক্র নানা পন্থায় পাহাড় সাবাড় করছে। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ পরিবেশ আন্দোলনে জড়িত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। সংঘবদ্ধ চক্র পাহাড়ি ভূমিতে আবাসন এলাকা গড়ে তোলাসহ বড় ধরনের বাণিজ্যের লক্ষ্যে পাহাড় সাবাড় অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামে সাধারণ সম্পাদক ও বেলার নেটওয়ার্ক মেম্বার আলীউর রহমান ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলার চট্টগ্রাম বিভাগীয় কোর্ডিনেটর মনিরা পারভিন গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই সময় পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের সিনিয়র কেমিস্ট রুবাইয়াত স্বরূপ ও কাট্টলীর এসি (ল্যান্ড) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ইফতেখার উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের পক্ষ থেকে বিষয়টি চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাসকে জানিয়েছেন। হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, আমাদের অগোছরে পাহাড় কাটা হয়। আমরা যেখানে খবর পাই সেখানেই অভিযান পরিচালনা করি। এখানে পাহাড় কাটার যে অভিযোগ উঠেছে অবশ্যই সেটি তদন্ত হবে এবং সংশ্লিষ্ট দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি যেখানে পাহাড়কাটা হবে সেখানেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামে ভয়াবহ আকারে পাহাড় কাটা চলে। বছর কয়েক আগেও চট্টগ্রামে ২০০টির মতো পাহাড় ছিল। গত চল্লিশ বছরে চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশের বেশি পাহাড় সাবাড় করে দেয়া হয়েছে।