একশ কিমির দীর্ঘ যানজট, তিনদিন ধরে মহাসড়কে অনেক যাত্রী

মাহবুব পলাশ, মীরসরাই | রবিবার , ২৫ আগস্ট, ২০২৪ at ৭:৪১ পূর্বাহ্ণ

ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী থেকে মীরসরাই পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকার যানজট অবশেষে শনিবার বিকেল নাগাদ ৮০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত এ যানজট দুইদিন দুইরাত পেরিয়ে টানা তিনদিনে পড়েছে বলে জানিয়েছেন অনেক বাস এবং ট্রাক চালক। কুমিল্লা থেকে মীরসরাই পর্যন্ত প্রায় শত কিলোমিটারের এই জ্যামের পরও কিছু স্বেচ্ছাসেবক সড়কের একটি লেইনে গাড়িগুলো সারি করে অপর লেইন দিয়ে বন্যাকবলিত এলাকার উদ্দেশে যাওয়া ও ত্রাণ সহযোগিতাকারীদের জন্য উন্মুক্ত রেখে সহযোগিতা করছেন। দূরদূরান্তের অনেক যাত্রীকে যানজটে পড়ে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত দুই রাত তিনদিনই কাটাতে হলো মহাসড়কে।

আটকে পড়া যাত্রীবাহী বাসের অনেকে ইতিমধ্যে কেউ হেঁটে, কেউ অপর লেনে বিকল্প উপায়ে কিছুটা হেঁটে, কিছুটা সিএনজি বা টেম্পোতে করে ভেঙে ভেঙে রওনা দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কোনো কোনো বাসে যাত্রীরা এখনো পর্যন্ত রয়ে গেছেন। মহিলা ও পুরুষসহ অনেকে আশেপাশের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কোনো কোনো এলাকায় মহাসড়কে নারী ও অসহায় যাত্রীরা অবস্থান করায় আশেপাশের মানুষ ডাকাতের কবল থেকে রক্ষা করতে পাহারাও দিচ্ছে।

শনিবার দুপুর নাগাদ সোনাপাহাড় এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের মিডইয়ানের ঘাসে বসে কিছু চালককে মোবাইলে লুডু খেলতে দেখা গেছে। আবার দুই কিশোরীকে দেখা গেল তাদের পান বানিয়ে দিচ্ছে। জানা গেল কিশোরীদের বাড়ি পাশেই, ওরা মহাসড়কে আটকে পড়া অসহায় মানুষকে খাবারদাবার দিয়ে মানবিক সহযোগিতা করছে। জানতে চাইলে কাভার্ড ভ্যানের চালক সিরাজুল ইসলাম (৫৫) বলেন, কি করবো বৃহস্পতিবার ৩টায় চট্টগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছি। রাতেই গাজীপুর পৌঁছার কথা। কিন্তু দুরাত তিনদিন পার হয়ে গেল এখনো মীরসরাই। কি আর করবো সময় তো কাটছে না, তাই লুডু খেলে সময় পার করছি।

মহাসড়কের বিএসআরএম’র নিকটবর্তী এলাকায় দেখা গেল, যাত্রীবাহী এসি বাসের কয়েকজন চালকও মিডইয়ানের গাছতলায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বাসে যাত্রীরা কেমন আছে জানতে চাইলে রবি এঙপ্রেস এর চালক ওয়ালী উল্লাহ (৫৬) বলেন, অনেক যাত্রী নিজেরা চলে গেছেন। মধ্যবয়সী ও বৃদ্ধ মহিলাসহ কয়েকজন পুরুষ যাত্রী এখনো আছেন, ওরা বাসেই শুয়ে বসে বাইরে হেঁটে কোনোভাবে সময় কাটাচ্ছেন। তিনদিন ধরে আটকে থাকার এমন দুর্দশা আর কখনো কোথাও হয়নি। চালক আরো বলেন, রাতে আশেপাশে ডাকাত আতংক শোনা যায়, তবে এখানকার আশেপাশের মানুষ রাতে আমাদের সাথেই থাকছে লাঠিসোটা নিয়ে।

গতকাল শনিবার বিকেলে এই রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পথে এই জ্যাম। তবে কয়েকজন চালক জানান, ইতিমধ্যে কুমিল্লা ও চৌদ্দগ্রামের দিকে রাস্তা কিছুটা সচল হয়ে আসছে, ফেনীর দিকেও মহাসড়কে পানি কমে আসার খবর পেয়েছেন। এখন সড়ক সচল হলে জ্যাম খুলতে বেশিক্ষণ লাগবে না। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে এমনটাই ধারণা অনেকের।

এই বিষয়ে মীরসরাই সার্কেল এর এসপি মনিরুল ইসলাম বলেন, এই জ্যামও অনেকটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো। বিশেষ করে বন্যা ও মহাসড়ক প্লাবিত হয়ে গাড়ি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে রোববারের মধ্যে এই মহাসড়ক সচল হয়ে উঠবে।

এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, আশা করছি ফেনীর এই বিপর্যস্ত অংশ ও পানি সরে গেলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরাও শুধুমাত্র প্রকৃতির অনুকূলতা পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে ছাত্রদলকর্মী তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম
পরবর্তী নিবন্ধবন্যায় চট্টগ্রামের ৭ উপজেলায় দেড় লাখ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট