জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক। একটি ক্রিকেট ম্যাচকে সুন্দর এবং উপভোগ্য করে তুলতে মাঠ কর্মীদের চেষ্টার যেন ত্রুটি থাকেনা। কি রোদ, কি বৃষ্টি, তাদের পরিশ্রমের যেন শেষ নেই। কিন্তু রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে যারা দেশের সম্মান বৃদ্ধি করতে নিজেদের ঘামের শেষ বিন্দুটুকু ঝেড়ে কাজ করেন দিন শেষে তারা পাননা যোগ্য প্রাপ্যটুকু। চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মাঠ কর্মী এবং অফিস কর্মী মিলিয়ে বিশাল একটি অংশ দীর্ঘ একযুগ করে ছিলেন বৈষম্যের শিকার। পাপন–মল্লিকদের আমলে চট্টগ্রাম থেকে কোন ফাইল গেলে বলা হতো এখন ফান্ড নেই। খরচের খাত বাড়ানো যাবেনা। অথচ তাদের রাজনৈতিক বিবেচনায় যেসব কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল তাদের চাকুরি ছয় মাস না যেতেই স্থায়ী করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের কথা আসলেই তাদের কাছে ফান্ড থাকতোনা। আরো নানা কথা। এমনকি চলতো হুমকি, ধমকিও। বলা হতো না পোষালে চাকুরি ছেড়ে চলে যাও। অথচ স্বল্প বেতনের এই সব কর্মীরা চাকরি ছেড়ে কোথায় যাবে। তাই চোখ বুঝে সব অত্যাচার সহ্য করে কাজ করে গেছে চট্টগ্রামের এসব কর্মীরা। অবশেষে ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে পতন হলো হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে পালালেন ক্রিকেট বোর্ডে দুর্দান্ড প্রতাপ দেখানো পাপন–মল্লিকরা। আর তাতেই যেন কপাল খুলল চট্টগ্রামের ক্রিকেট মাঠের এসব কর্মীদের। বিসিবির নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ সদয় হলেন এসব নিন্ম আয়ের কর্মীদের প্রতি। নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র তৃতীয় সভায় এসে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সহ সারা দেশের ১১০ জন মাঠ কর্মী এবং অফিস কর্মীর চাকরি স্থায়ী করলেন। যেখানে চট্টগ্রামের রয়েছে সাতজন। চট্টগ্রামের কর্মীরা যেন দ্বিগুন উৎসাহে কাজ করার অক্সিজেন পেল।
গত বৃহস্পতিবার ক্রিকেট বোর্ডের সভায় যাদের চাকরি স্থায়ী করা হয় তাদের অনেকে প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মাস্টাররোলে চাকরি করছিলেন। বিগত সভাপতির সময়ে ঢাকা অফিসে বার বার আবেদন করেও কোন সাড়া মেলেনি। বরং এক পর্যায়ে তাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে বিসিবি এখন আর কোন কর্মচারীকে স্থায়ী করবে না। ফলে কর্মচারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে হতাশা, ক্ষোভ ও অসন্তোষ কাজ করছিলো। অনেকে ইতোমধ্যে বিসিবি’র চাকরি ছেড়ে অন্য কাজে যোগদানও করেছিলেন। বিসিবি’র নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বঞ্চিত কর্মচারীরা বিভিন্নভাবে তাদের দাবি উত্থাপন করতে থাকে। এক পর্যায়ে গ্রাউন্ড্স বিভাগের সিনিয়র ন্যাশনাল ম্যানেজার আব্দুল বাতেন এবং ডেপুটি ম্যানেজার রতন কুমার বিশ্বাস সকল কর্মচারীর পক্ষে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে বিসিবি সভাপতিকে অবহিত করেন। দীর্ঘ সময় ধরে এতো বিপূল সংখ্যক কর্মচারীর চাকরি স্থায়ীকরণ না হওয়ার বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিসিবি সভাপতি এবং অর্থ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদেরকে লিখিত রিপোর্ট প্রদানের নিদের্শ প্রদান করেন। প্রায় ১ মাস ধরে চলা বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষনের পরে অবশেষে কর্মচারীদের এই বহুল প্রতিক্ষিত ঘোষনাটি এলো। নতুন সভাপতি ফারুক আহমেদ এর হাত ধরে এ যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে বিসিবি’র ভেন্যু সমূহে এখন আনন্দের জোয়ার। খুশিতে কেঁদে ফেললেন অনেক কর্মী। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের একাধিক মাঠ কর্মী জানালেন তারা দীর্ঘ একযুগ ধরে হতাশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে আল্লাহ যেন তাদের দিকে তাকালেন। তারা নতুন বিসিবি সভাপতি ফারুখ আহমেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সাথে তাদের সামর্থের সবটুকু দিয়ে এই সংস্থার জন্য কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। চট্টগ্রাম ভেন্যুতে যেসব কর্মীর চাকরি স্থায়ী হয়েছে তাদের মধ্যে অফিসে কাজ করা মাইনুদ্দিন, সালেক, মহসিন। আর মাঠে কাজ করা রাসেল, জগন্নাথ, রফিকুল ও আলামিন। যাদের মধ্যে মাইনুদ্দিন সর্বোচ্চ ১৩ বছর ধরে মাস্টাররোলে কাজ করছিলেন।
গতকাল বিসিবির সিনিয়র ন্যাশনাল ম্যানেজার সৈয়দ আবুদল বাতেন দৈনিক আজাদীকে বলেন আসলে বিসিবির গত সভাপতির আমলে অনেক চেষ্টা করেও আমরা আমাদের কর্মীদের চাকরি স্থায়ী করতে পারিনি। তাই কর্মীদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছিল। তবে বর্তমান সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তৃতীয় সভায় কর্মীদের মানের আকাংখা বুঝতে পেরেছেন। তিনি বিশাল সংখ্যক কর্মীকে স্থায়ীকরণের পাশাপাািশ পরিস্কার ঘোষণা দিয়েছেন আর কোন কর্মীকে তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য আবেদন করতে হবেনা। চাকরি বিধি অনুযায়ী শর্ত পুরণ করলেই স্ব স্ব মর্যাদা পাবে।