ভোর পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত তারা কাজ করে। ব্যবহার করে দুইটি সিএনজি অটোরিকশা ও দুইটি টমটম। আট জনের সিন্ডিকেট হলেও কাজে যায় চার জন। কখন কারা নগরীর কোন দিকে কাজে যাবে, তাও আগে থেকে নির্ধারিত থাকে। চলতি মাসেই তারা ছিনতাই করেছে প্রায় অর্ধশতাধিক। সেই হিসেবে তারা দৈনিক ছিনতাই করেছে দুই থেকে তিনটি। মামলা করেনি কেউ। মাত্র দুই ঘণ্টায় তাদের আয় কমপক্ষে দশ থেকে পনের হাজার টাকা। প্রতিটি ছিনতাইয়ে সময় নেয় মাত্র দশ সেকেন্ড! এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নেজাম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, এসআই মো. মোমিনুল হাসান গত ২২ জুন ফোর্স নিয়ে দায়িত্ব পালন কালে রাত পৌনে আটটার দিকে বান্ডেল রোডস্থ কবরস্থানের পাশে থেকে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনার সময় মনির হোসেন (১৯) ও জসিম (৪২)কে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের সহযোগীরা পালিয়ে যায়। এসময় মনির হোসেন থেকে ২টি ছোরা ও জসিম থেকে একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।
একই সময় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশা (চট্টমেট্টো থ- ১৩-২৪০১) জব্দ করা হয়। সিএনজিটি তল্লাশি করে সিটের ওপর থেকে আরেকটি ছোরা এবং সিটের পেছন থেকে একটি স্টিলের পাইপ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের সহযোগী ইমরান (২০), আব্দুল্লাহ আল নোমান (১৯), শাহীন (২০) ও সাজ্জাদ হোসেন প্রকাশ শান্ত (২২) পালিয়ে গেছে বলে জানায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২২ জুন পৌনে দশটার দিকে বাকলিয়া থানাধীন রাহাত্তারপুল এলাকা থেকে ইমরানকে (২০) এবং কালামিয়া বাজার থেকে এলাকা থেকে আব্দুল্লাহ আল নোমানকে (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
এসআই মোমিনুল আজাদীকে জানান, ওরা ভোর বেলার পাখি। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা আট জন। তাদের বাসা বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার থেকে রাহাত্তার পুলের মধ্যে। চক্রের বাকি চার সদস্য শহীদ, শান্ত, শাহীন ও সাকিবকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এদের মধ্যে সাকিব ও শান্ত দুই ভাই। একেক দিনে তিন চার জন ভোর বেলা বের হয়। পুরো শহর প্রদক্ষিণ করে সিএনজি অটোরিকশা অথবা টমটম যোগে। এক মাসে তারা নগর জুড়ে অর্ধশতাধিক কাজ করেছে।
অভিযান টিমের সদস্য এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস আজাদীকে জানান, সিএনজি যোগে ফ্লাইওভার দিয়ে উঠে নিচে দিয়ে নামে তারা। জিইসির মোড়, ওয়াসা, ষোলশহর, মুরাদপুর হয়ে চলে যায় পতেঙ্গার দিকে। এরই মধ্যে রাস্তায় রিকশা যাত্রী যাকে পাবে, সুযোগ বুঝে ঠেক দেয়। সিএনজি অটোরিকশা তখন চলন্ত অবস্থায় থাকে। ছুরি ঠেকিয়ে মাত্র দশ থেকে পনের সেকেন্ডের মধ্যে মালামাল নিয়ে সিএনজিতে উঠে চলে যায়। দুইটা সিএনজি ও দুইটা টমটম তাদের সম্বল। এদের টার্গেট ভোরে বাড়ি ফেরত বা অফিসগামী যাত্রী। প্রত্যেকেই মাদকাসক্ত হওয়ায় যা পায় তা নিয়েই দ্রুত চলে যায়। মোবাইল ও টাকা তাদের টার্গেট। গলায় স্বর্ণের চেইন থাকলে টান দেয়, নয়তো ওদিকে চোখ দেয় না। চলতি মাসে স্টেডিয়াম এলাকায়, জিইসির মোড়ে, ওয়াসার মোড়ে, দেওয়ানহাট মোড়ে, চৌমুহনির মোড়ে এবং কদমতলীর মোড়ে তাদের ছিনতাইয়ের তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে আছে।
পুলিশ জানায়, শান্তর স্ত্রী নার্গিস ছিনতাই করা মোবাইল ফেরত দেয়ার নামে বিকাশে টাকা দাবি করে। ১৪ জুন ছিনতাই করা মোবাইল ফেরত দেয়ার নামে টাকা চায়। তাদের গ্রুপে থাকা মহিলারা নেপথ্যে থেকে মোবাইলে টাকা দাবি, মোবাইল বিক্রিসহ অন্যান্য কাজ করে থাকে।