চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়ানিক পরীক্ষাগারে (ল্যাব) গত প্রায় এক বছর ধরে একজন পরীক্ষক দিয়েই চলছে কার্যক্রম। সেই পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি চলে যাচ্ছেন অবসরে। একমাত্র রাসায়নিক পরীক্ষকের অবসরের বিষয়টি মাথায় রেখে গত ছয় মাস ধরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) নতুন জনবল নিয়োগের জন্য তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একইসাথে ল্যাবের বিভিন্ন অসুবিধার বিষয়েও এনবিআরে চিঠি লিখা হয়। এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এমনকি পরীক্ষক আবদুল হান্নানের অবসরের পর ল্যাবের পরীক্ষণ কার্যক্রম কে চালাবেন, এটিও জানে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ফলে ল্যাবের কার্যক্রম পরিচালনা নিয়েই তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
কাস্টমস ল্যাব সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবে প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন পণ্যের ৬০-৭০টি নমুনা আসে। এগুলো আবার দ্রুত পরীক্ষা করে দিতে হয়। কিন্তু জনবলের সংকটের কারণে পরীক্ষা করতে রীতিমত নাভিশ্বাস উঠে যায়। একজন পরীক্ষক দিয়ে কাজ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। জনবল সংকটের কারণে প্রায় সময় ল্যাবে নমুনা পরীক্ষার জট লেগে যায়। এতে সময় মতো রিপোর্ট হাতে পান ব্যবসায়ীরা। তাই পণ্য খালাস প্রক্রিয়াও বাঁধাগ্রস্থ হয় বলে জানা গেছে।
আমদানি রপ্তানি সংশ্লিষ্টরা জানান, আমদানি পণ্য বন্দর থেকে খালাসের আগে ক্ষেত্রবিশেষে পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। রাসায়নিক পরীক্ষকরা ঘোষণা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের মান ঠিক আছে কিনা সেটি পরীক্ষা করে দেখেন। কেবল রাসায়নিক পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক হলেই খালাসের অনুমতি মেলে। আবার কোনো আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য নিয়ে এলে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে পরীক্ষকরা সেই পণ্যের যথাযথ শুল্কায়নের জন্য সুপারিশ করে থাকেন। এতে সরকারের প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি রোধ হয়।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ল্যাবে বিদ্যমান জনবল কাঠামোতে ১৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। এছাড়া কাঠামোর বাইরে দুজনকে ‘ঊর্ধ্বতন সহকারী পরীক্ষক’ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। এরমধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র একজন। অথচ জনবল কাঠামো অনুযায়ী একজন প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক এবং ৩ জন উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ ল্যাবের কার্যক্রম শুরু থেকেই শূণ্য রয়েছে। বর্তমানে দুজন রাসায়নিক পরীক্ষকের মধ্যে আছেন একজন। এছাড়া ৬ জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের মধ্যে একজনও নেই। জনবল কাঠামো অনুযায়ী ৩ জন ল্যাব এটেন্ডেন্ট থাকলেও আবার পিয়ন নাই। ফলে প্রতিদিন ল্যাবে যে পরিমাণ পণ্যের নমুনা এসে জমা হচ্ছে, সেইসব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেই রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে পরীক্ষকদের। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ল্যাবের জন্য প্রস্তাবিত জনবল কাঠামোতে ৮ পদে ৯৫ জনকে নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, ৩ জন উপ-প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক, ৮ জন রাসায়নিক পরীক্ষক, ৪৬ জন সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষক, ৬ জন ল্যাব এটেন্ডেন্ট, এবং একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানি রিগ্যান দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে জনবলের সংকট রয়েছে। এই কাস্টমসের মাধ্যমে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ করছে। অথচ কাস্টমসের ল্যাবে জনবল নাই। এটার জন্য আমাদের প্রতিনিয়ত ভুগতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের ল্যাবের সক্ষমতা বাড়ানো জন্য আমরা বিভিন্ন ফোরামের সভায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও এনবিআরের কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজের কিছুই হয়নি। এতবড় একটা কাস্টম হাউসের ল্যাব মাত্র একজন পরীক্ষক দিয়েই চলছে, এটি ভাবা যায় না। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি আবার অবসরে চলে যাচ্ছেন, এখন ভবিষ্যতে ওনার জায়গায় কে আসবেন এটি এখনো নিশ্চত হয়নি। এটি দুঃখজনক।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, প্রত্যেক শুল্ক স্টেশনে রাসায়নিক পরীক্ষাগার ও পদ সৃষ্টির জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি এনবিআর অবগত আছে। আমরা বেশ ক’বার এনবিআরকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছি। নতুন পরীক্ষক নিয়োগের বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোনো ধরণের আপডেট পাইনি।












