এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সাত বছর বয়সী শিশু মোহাম্মদ আজাদের গলার ক্যান্সার। ছেলেকে নিয়ে সে থেকে তার মা সুলতানা বেগমের যুদ্ধ। প্রথমদিকে রোগ বুঝতে পারেনি শিশুটির পরিবার। পরে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে সুদূর কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজি বিভাগে। ছেলের অসুস্থতার কারণে একাধিকবার ওয়ার্ডে ভর্তি হতে হয়েছে। চিকিৎসাও চলে ঠিকঠাক। তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে মোহাম্মদ আজাদসহ ওয়ার্ডে ভর্তি ১৩ রোগীর। গত ২৯ এপ্রিল অবসরে চলে যান পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজি বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক ও বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এ কে এম রেজাউল করিম। ফলে বর্তমানে বিভাগে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রইল না। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সরেজমিনে হেমাটো অনকোলজি বিভাগে ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে ওয়ার্ডে ভর্তি আছে বিভিন্ন বয়সী ১৩ শিশু। তারা সবাই ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জটিল রক্তরোগে আক্রান্ত।
জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে গত বছর প্রায় দুইশ’র কাছাকাছি ক্যান্সারে আক্রান্ত নতুন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশই ব্লাড ক্যান্সারের রোগী। অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ার্ডে কাজ করলেও এত বছরে তার বিকল্প একজনও চিকিৎসককেও পদায়ন করা হয়নি।
চমেক হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজি ওয়ার্ডে ব্রেন টিউমার নিয়ে ভর্তি হয় ছয় বছরের শিশু নীল আশা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় শিশুটির অভিভাবকরা পড়েছেন বিপাকে। শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে যথাযথ সিদ্ধান্ত পাচ্ছেন না অভিযোগ পরিবারের।
চমেক হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম অবসরের যাওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি একইসাথে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ ও হেমাটো অনকোলজি বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধানের পদে আসেন অধ্যাপক ডা. জেবীন চৌধুরী। বর্তমানে পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজি বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মিত্রা দত্ত ও ডা. আয়েশা বেগমকে নিয়মিত রাউন্ড দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিশুদের ক্যান্সার ও রক্তরোগের চিকিৎসা দেয়া একজন শিশু রোগ বিশেষজ্ঞের পক্ষে দেয়া কিছুটা কঠিন। এই বিষয়ে যিনি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তার পক্ষে চিকিৎসা দেয়া অধিকতর সহজ। কারণ এখানে রোগ নির্ণয় করে দ্রুত চিকিৎসা দেয়াটা জরুরি।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, পেডিয়াট্রিক হেমাটো অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। আমরা বিভাগে চিকিৎসক আনার চেষ্টা করছি।