একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনের যন্ত্রাংশ বিকল

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং লাগানো বন্ধ, সমস্যায় রোগীরা

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:৩৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামে মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগে বিভাগের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটির গুরুত্বপূর্ণ একটি যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে গেছে। ফলে গত দুদিন ধরে রোগীদের হার্টের এনজিওগ্রাম ও রিং লাগানো বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। অনেক রোগী পূর্বনির্ধারিত সময়ে ভর্তি হতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, যন্ত্রাংশ নষ্টের বিষয়টি মেশিনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি শিগগিরই এসে সেটি মেরামত করে দেবেন।

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চার বছর ধরে জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের একটি মেশিন দিয়ে টিপিএম, পিপিএম, এনজিওগ্রাম, পেরিপাইরাল এনজিওগ্রাম ও রক্তনালীতে রিং স্থাপনের কাজ চলছে। কাজের অতিরিক্ত চাপের কারণে গত বছরের জানুয়ারিতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রায় দুই সপ্তাহ মেশিনটি বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে মেশিনটির সরবরাহকারী কোম্পানির প্রতিনিধিরা পিকচার টিউব স্থাপন করে সচল করেন। দেড় বছরের মাথায় আবার যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এখন এনজিওগ্রাম ও রিং লাগনো বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ২০২১ সালের শেষের দিকে অপর একটি এনজিওগ্রাম মেশিনের পিকচার টিউব নষ্ট হয়ে যায়। মেশিনটি সচল করতে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রয়োজন হতে পারে বলে জানিয়েছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। সেটি আর মেরামত করা হয়নি। তবে সেই মেশিনটির স্থলে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে থাকা অব্যবহৃত একটি এনজিওগ্রাম মেশিন চমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। সেই মেশিনটি চালু করা গেলে এ রকম সংকট হবে না বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

লোহাগাড়ার কলাউজান ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ আজাদীকে বলেন, আগামীকাল (আজ) আমার হার্টে দুটি রিং লাগানোর কথা। সেই হিসেবে চিকিৎসক আমাকে আজ (গতকাল) ভর্তি হতে বলেছিলেন। ভর্তি হতে এসে শুনি মেশিন নষ্ট। ফলে আমার মতো অনেক রোগী বিপদে পড়েছেন। এতদিন টাকা যোগাড় করতে না পারায় আসতে পারিনি। বেসরকারি হাসপাতালে রিং লাগানো ব্যয়বহুল। চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের মতো একটি জায়গায় একটি মাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনের মাধ্যমে রিং ও এনজিওগ্রাম করা হচ্ছিল, এটি কোনোভাবেই মানা যায় না।

হৃদরোগ বিভাগের চিকিৎসসকরা জানান, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ প্রতিবেশী দেশ ভারত, সিঙ্গাপুরব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশনের (এনজিওগ্রাম) মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজন মতো রক্তনালীতে রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপচার করা হয়।

চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. নূর উদ্দিন তারেক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার কারণে এনজিওগ্রাম ও রিং লাগানো বন্ধ হয়েছে। তবে আমরা জরুরি টিপিএম ও পিপিএম স্থাপনের কাজ করতে পারছি।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের এনজিওগ্রাম মেশিনের একটি যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। মেশিনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়েছি। ওরা এসে মেরামত করে দেবে বলে আমাদের জানিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছেলেকে বিষ খাইয়ে মেরে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালীতে যুবককে গুলি করে হত্যা