একনেকে ওঠার বাধা কাটছে

ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ প্রকল্প ১৩ বছর পার ১১ বার প্রকল্প সংশোধন

হাসান আকবর | সোমবার , ২২ মে, ২০২৩ at ৭:৩৯ পূর্বাহ্ণ

অবশেষে একনেকে উঠতে যাচ্ছে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণ প্রকল্প। প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও নানা প্রতিকূলতায় ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে ঝুলছে। ২০১০ সালে নেয়া প্রকল্পটি সংশোধিত হয়েছে অন্তত ১১ বার। প্রতিবারই সময় বাড়ানো হয়েছে। একই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ব্যয়। ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে। শেষ মুহূর্তে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে আবারো ব্যয় বাড়ায় সবকিছু গুছিয়ে আনার পরও প্রকল্পটি একনেকে উঠতে বাড়তি সময় লাগছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা যায়, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় অবলম্বন পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড। ১৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধনের ক্ষমতা সম্পন্ন এই রিফাইনারি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। দীর্ঘদিনের ব্যবহারে রিফাইনারিটির সক্ষমতা কিছুটা কমে এসেছে। ফলে ক্রুড অয়েলের পরিবর্তে পরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ এবং নির্ভরতা বাড়ছে। বর্তমানে দেশে প্রায় ৬৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এর বেশিরভাগ আমদানি করা হয় পরিশোধিত অবস্থায়। ক্রুড অয়েল থেকে রিফাইনড অয়েলের মূল্য চড়া। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। ক্রুড অয়েল আমদানি করে দেশে পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা রক্ষা পেত। এই অবস্থায় ২০১০ সালে সরকার ৩০ লাখ টন জ্বালানি তেল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্টার্ন রিফাইনারি২ নামে নতুন একটি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২শ একর জায়গার এক পাশে ৭০ একর জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ১৩ বছর গত হলেও প্রকল্পটির কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে ১১ বার প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ১৩ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৯ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা হয়েছে।

গত ১৬ এপ্রিল প্রকল্পটির ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রকল্পটির গুরুত্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। শেষ মুহূর্তে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে প্রায় ৫শ কোটি টাকা খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি লিকুইটি সার্টিফিকেট প্রয়োজন। এটি প্রদানের জন্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পত্র দেয়া হয়েছে। এই সার্টিফিকেট আসার সাথে সাথে প্রকল্পটি একনেকে তোলা হবে। একনেকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রকল্পটির কার্যক্রম শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পটির ৩০ শতাংশ অর্থায়ন করবে বিপিসি। বাকি ৭০ শতাংশ সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেয়ার কথা রয়েছে।

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান আজাদীকে বলেন, আমরা সবকিছু গুছিয়ে এনেছি। প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সেটিও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। অচিরেই প্রকল্পটি একনেকে উঠবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিট নির্মিত হলে দেশে ৪৫ লাখ টন ক্রুড অয়েল পরিশোধনের সক্ষমতা তৈরি হবে, যা জ্বালানি নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে দায়ী ‘সিন্ডিকেট’
পরবর্তী নিবন্ধওসি প্রদীপের সম্পদের খোঁজে সাত দেশে দুদকের চিঠি