একদিন পর আবার ডুবল নগর

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৩ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

টানা ভারী বর্ষণের একদিন পর আবারও ভারী বর্ষণের পানিতে ডুবল চট্টগ্রাম নগরী। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি হয়েছে ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার। শুধুমাত্র সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি ঝরেছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে দিনের প্রথম জোয়ার। সবমিলিয়ে ডুবেছে নগরীর প্রায় এলাকাসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কও। সকালে মুরাদপুর আবারো ডুবেছে একবুক সমান পানিতে। তবে নগরীর অন্যান্য স্থানের কোথাও কোমর সমান পানিতে; কোথাও তারও কম পানিতে ডুবেছে। পানির স্থায়ীত্ব ছিল কম। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে নগরীর প্রায় এলাকা থেকে পানি নেমে যায়।

সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত ১৬ অগাস্ট থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। গত বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা ভারী বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। গতকাল সকালের দিকে বৃষ্টির তীব্রতা আরো বাড়তে থাকে। এসময় জোয়ারের পানি বাড়তে থাকায় নগরীর প্রায় এলাকা ডুবে যায়। বিশেষ করে বাসাবাড়ি ও দোকানমার্কেটের নিচতলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।

পানির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি ছিল মুরাদপুর এবং বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের মুখের অংশে। সেখানকার স্বজন সুপার মার্কেটের নিচতলা তলিয়েছে পানিতে। এছাড়া বাদুরতলাকাপাসগোলা সড়কে হাঁটু সমান পানি দেখা গেছে। সকাল থেকে নগরীর বেশ কয়েকটি প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সকালে অফিসআদালতসহ অন্যান্য কর্মস্থলমুখী লোকজনের দুর্ভোগ হয়েছে। জলাবদ্ধতায় শহরের প্রধান বা মূল সড়কগুলোতে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। তাই বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটেই কর্মস্থলে পৌঁছান।

সরেজমিনে চকবাজারকাতালগঞ্জ বৌদ্ধ মন্দির সড়ক এবং বাদুরতলা এলাকায় গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রায় এলাকায় নিচ তলায় বাসাবাড়িতে এবং দোকানপাটে পানি ঢুকে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সকাল সকাল বাসাবাড়ির নিচ তলায় পানি উঠায় অনেকে সকালের চাখাবারও খেতে পারেননি বলে জানিয়েছেন। আগ্রাবাদ মোল্যা পাড়ার বাসিন্দা আবদুর রশিদ ও লাল মিয়া জানান, তাদের একতলা বাসায় পানি ঢুকে সকল আসবাবপত্র ডুবে গেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং প্রায় এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, মুরাদপুর এলাকা একবুক সমান পানিতে ডুবে গেছে। এছাড়াও শুলকবহর, বাদুরতলা কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বড় গ্যারেজ, ডিসি রোড, ফুলতলা, খলিফাপট্টি, কে বি আমান আলী রোড, মেহেদীবাগ, চকবাজার, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, ওয়াসা রেবতী মোহন সড়ক, প্রবর্তক মোড়, তিন পোলের মাথা, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, আগ্রাবাদ রঙ্গীপাড়া, বেপারী পাড়া, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর কুসুমবাগ, হালিশহর ওয়াপদাসহ সন্নিহিত এলাকায় হাঁটু থেকে তারও বেশি পানি উঠেছে। মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, সকাল থেকে ভারী বৃষ্টির সাথে জোয়ারের পানি যুক্ত হওয়ায় পুরো এলাকা এক বুক পানিতে ডুবে যায়। আমাদের এলাকায় নিচতলার বাসাবাড়িদোকানমাকের্ট সব ডুবে গেছে। ১১টার পর থেকে পানি নামতে শুরু করে।

চকবাজার এলাকার স্থানীয় দোকানদার আবদুর রাজ্জাক বলেন, সকাল থেকে আমাদের চকবাজারবাদুরতলাকাপাসগোলাকাতালগঞ্জকোমর সামন পানিতে ডুবে গেছে। বেলা বাড়তে বাড়তে অবশ্য পানি কমে গেছে। নিচু এলাকার সব বাসাবাড়িদোকান কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে। তবে পানি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আড়াই ঘণ্টাতিন ঘণ্টার মধ্যে নেমে গেছে। এই এলাকার নিচতলার প্রায় দোকান অর্ধেক ডুবে গেছে। সকাল থেকে রাস্তায় পানি। গাড়ি চলছে না।

বহদ্দারহাট মোড়ের ফল বিক্রেতা শফি সকালে ভ্যানে ফল বিক্রির জন্য এসেছেন। এসে দেখেন পুরো এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। শফি বলেন, প্রতিদিন ফল বিক্রি করে তার ৩ থেকে ৪শ’ টাকা আয় হয়। কোনো কোনোদিন ৫ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। গত কয়েকদিন বৃষ্টিতে তার আয় রোজগার একেবারেই কম বলে জানান। গতকাল সকালে এসেও বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে দোকান খুলতে পারেননি তিনি।

মাছুয়া ঝর্ণা এলাকার বাসিন্দা সমীরণ পাল বলেন, সকাল ৯টায় বাসা পানিতে ডুবে গেছে। ১১টার পর আস্তে আস্তে নেমে গেছে।

এদিকে জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রিকশা ও ভ্যানগাড়িতে যাতায়াতে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন। এসময় দুর্ভোগে পড়েছেন কর্মজীবীরা।

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ : পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৪১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বৃষ্টিপাত আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় চট্টগ্রাম নগরীতে বৃষ্টি ঝরেছে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি। পাশাপাশি পাহাড়ধসের সতর্কতাও জারি করা হয়েছে। সরকারিবেসরকারি মালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ মোট ২৬টি পাহাড় আছে। এসব পাহাড়ে বাস করে ৬ হাজার ৫৫৮টি পরিবার। ২৬ পাহাড়ের মধ্যে ১৬টি সরকারি সংস্থার ও ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে পানির স্রোতে বিধ্বস্ত সড়ক, ভেসে গেল পুকুরের মাছ