‘একদিন গাড়িটানা গেলে বাড়ি এসে খেতে হয় ব্যথার ওষুধ’

নারায়ণহাট-গাড়িটানা সড়কে ভোগান্তি

মোহাম্মদ জিপন উদ্দিন, ফটিকছড়ি | রবিবার , ৭ জুলাই, ২০২৪ at ৯:০৯ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ি উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নারায়ণহাটনেপচুনগাড়িটানা সড়ক। এটি ফটিকছড়ির সাথে মানিকছড়ি উপজেলা, নেপচুন চা বাগান, সেমুতাং গ্যাস ফিল্ডসহ ৮১০ গ্রামের যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সড়কটির ফটিকছড়ি অংশের প্রায় ৭ কিলোমিটারের বেহাল দশা। অধিকাংশ স্থান খানাখন্দ আর বড় গর্তে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি। প্রতিদিনই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারী, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, যাত্রীসাধারণসহ পরিবহন চালকরা।

অন্যদিকে এ ৭ কিলোমিটার সড়কের খুলার পাড়া হাছি ড্রাইভার বাড়ি থেকে নেপচুন টিলা পাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার কার্পেটিং দ্বারা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ মেকাডম করাতেই পড়ে আছে। কয়েকবার অভিযোগও উঠেছে এ সড়কে নিম্নমানের কাজ হচ্ছে। কাজে বাধাও দিয়েছে স্থানীয় মেম্বারসহ কয়েকজন। তবে বিষয়টি তদারকি করে সঠিকভাবে কাজ আদায় করার কথা বলছে স্থানীয় এলজিইডি অফিস।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাকি ৫ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার না হওয়ায় সড়কে অনেক অংশে পাকা রাস্তার চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না। সড়কটির উপরের সকল ইট প্রায় উঠে গেছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্তের। পিলখানা, খুলার পাড়া, ত্রিপুরা পাড়া, নোয়াপাড়া, খামারবিটা, চুলারখিল, কালাপানি, সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড, গাড়িটানা ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বহু শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মজীবী, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার লোকজনকে চলাচল করতে হয়। কিন্তু সড়কের বেহাল দশায় যান চলাচল প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে শিক্ষকশিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। একেকটা গর্ত যেন মরণফাঁদ। এতে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার খানাখন্দ পানিতে ভরে যায়। হাজার হাজার মানুষকে নানান প্রতিকূলতা আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এ সড়কে।

নোয়াপাড়া গ্রামের তোফায়েল মিয়া বলেন, নারায়ণহাটগাড়িটানা সড়কের বেহাল অবস্থা। একদিন গাড়িটানা গেলে বাড়িতে এসে ব্যথার ওষুধ খেতে হয়। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে জনসাধারণ অনেক উপকৃত হবে।

ব্যবসায়ী সেলিম আহমেদ বলেন, বিভিন্ন কাজে এ সড়ক হয়ে যেতে হয়। রাস্তার জন্য ভাল কোন গাড়ি এ পথে চলে না। মোটরসাইকেলই শেষ ভরসা। সড়কটি ভেঙে বড় বড় গর্ত হওয়াতে এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় মানুষের খুবই দুর্ভোগ হয়। এখন একেকটা ভাঙন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

টেক্সিচালক মো. মাসুদ জানান, সড়কটি পুরোপুরি ভেঙে গেছে। কেউই সংস্কার করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। ভাঙা সড়ক দিয়ে গাড়ি চালানোর কারণে কয়েকদিন পরপর টেঙি নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে এ পথে যেতে হয়। দ্রুত সংস্কার হলে আমরা উপকৃত হবো।

নারায়ণহাট ইউপির ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য জামাল উদ্দিন জানান, আমাদের এ সড়কের অবস্থা কেউ না আসলে বুঝতে পারবে না। মানুষ চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তি হচ্ছে। তার উপর ৭ কিলোমিটার সড়কের যে ২ কিলোমিটার বাজেট হয়েছে তার কাজও হচ্ছে নিম্নমানের। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ করছে। আমি কয়েকবার কাজে বাধাও দিয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ এ সড়কের ২ কিলোমিটার কাজ সঠিকভাবে হোক এবং বাকি আরো ৫ কিলোমিটার কাজও করার যেন উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান আবু জাফর মাহমুদ বলেন, হাজার হাজার মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগ নারায়ণহাটগাড়িটানা সড়ক। ৭ কিলোমিটার সড়কের যে ২ কিলোমিটারে কাজ চলছে তাতে অনিয়ম হচ্ছে। এছাড়া বাকি ৫ কি.মি সড়ক সংস্কারের জন্য আমি মাননীয় এমপিসহ সকলের কাছে অনুরোধ রাখছি।

এ প্রসঙ্গে ফটিকছড়ি উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, ২ কি.মি সড়কের যে ঠিকাদার কাজ করছে সে বেশি ধীরগতি। প্রেসার দিলে ২ দিন কাজ করে, আবার পরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত কাজ করার জন্য। যে অভিযোগ এবং সমস্যা ছিল তা আমি গিয়ে সমাধান করে দিয়ে আসছি। বাকি ৫ কি.মি সড়কের কাজ প্রকল্পে প্রস্তাব করা আছে এখনো অনুমোদন হয়নি। ধীরে ধীরে ওটাও হয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী ধারা সৃষ্টি করেছেন’
পরবর্তী নিবন্ধতামাকুমন্ডি লেইন বণিক সমিতির অভিষেক