নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে একদিনের মাথায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চার জনের কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়েছে। মাঠ প্রশাসনে রদবদলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষোভের মধ্যে নতুন এ সিদ্ধান্ত জানাল অন্তর্বর্তী সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গতকাল বুধবার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আট জেলায় মঙ্গলবার যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের উইথড্র করা হয়েছে। মঙ্গলবার ৩৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এরমধ্যে আট জেলায় যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তারা আর ডিসি নেই। আগের দিন সোমবার ২৫ জনকে দেওয়া হয়েছিল; এরমধ্যে সিলেটে একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে দেওয়া হয়েছে। এই আট জেলা হল লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ী। খবর বিডিনিউজের।
প্রত্যাহার করে নেওয়া আট কর্মকর্তা হলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী (লক্ষ্মীপুর), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার (সিরাজগঞ্জ), আরপিএটিসির উপপরিচালক মনোয়ারা বেগম (রাজবাড়ী), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান (রাজশাহী), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুল আজিজ (শরীয়তপুর), পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলাম (দিনাজপুর); যারা মঙ্গলবার ডিসির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি–২ এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান (জয়পুরহাট) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা ইসলামকে (কুষ্টিয়া) ডিসি হিসেবে বদলির আদেশও বাতিল করা হয়েছে। এই দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সোমবার। যে চার জেলায় ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে, তার মধ্যে টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইল, নাটোরে ডিসিকে লক্ষ্মীপুর এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।
ক্ষমতার পটপরিবর্তানের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় গত সোমবার ২৫ জন ও মঙ্গলবার ৩৪ জনকে জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়য়। কিন্তু মঙ্গলবার দিনভর সচিবালয়ে হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ উপসচিবরা; শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন।
দুই দিনের মধ্যে ৫৯ জেলায় নতুন ডিসি দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে আমলাদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষের জের গতকাল বুধবারও দেখা গেছে সচিবালয়ে; কয়েক ঘণ্টা ধরে হট্টগোলের পর বিকালে এসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কক্ষে তালা মারার প্রস্তুতি নিতেও দেখা যায়। নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা বিক্ষুব্ধ এই আমলারা ৫৯ জন নতুন ডিসির প্রজ্ঞাপন বাতিল করে যোগ্যদের তালিকা করে নতুন প্রজ্ঞাপন দেওয়ার দাবিতে সচিবালয়ে তৎপর রয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে ৩০–৪০ জন উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে চাপ দেন। বিকালে বিক্ষুব্ধ আমলাদের জনপ্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (নিয়োগ পদন্নতি ও প্রেষণ) কক্ষে তালা লাগানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। অবশ্য পরে তালা না দিয়ে যাতে এই কর্মকর্তা কক্ষ থেকে বের হতে না পারেন, সে জন্য কক্ষের সামনে তাদের পাহারা বসাতে দেখা যায়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিক্ষে বিক্ষুব্ধ উপ–সচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের পর পর জেলা প্রশাসকপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দাবি– প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনে যারা সুবিধাভোগী; যারা এই ছাত্র–জনতা হত্যার সঙ্গে জড়িত; খুন লুটপাট ও রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল; যারা এখনও পর্যন্ত ছাত্র জনতার এই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে; সেসব কর্মকর্তাকে বিদায় দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নূরুল করিম বলেন, যেহেতু এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।
আট জেলায় নতুন ডিসি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে নূরুল করিমের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আপনারা নতুন কোনো সিদ্ধান্ত পাবেন। আমাদের দাবি ছিল, আজ (বুধবার) বিকাল ৫টার মধ্যে তারা যেন এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তিনি আমাদের বলেছেন যতদ্রুত সম্ভব তিনি এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলবেন, আমাদের ইমোশনের কথা তাকে জানাবেন।
বিকাল ৫টার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় এখন তারা কী করবেন– এমন প্রশ্নে বিক্ষুব্ধ উপসচিবদের মধ্যে একজন বলেন, আমাদের দাবি হচ্ছে প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সেটা করতেই হবে। আগের প্রজ্ঞাপনের কয়েকজনকে রাখতে হলে সেটা নতুন প্রজ্ঞাপনে রাখবেন। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানে আছি। বিকালে ডিসিপ্রত্যাশীদের বেশিরভাগই দাবি আদায়ে কড়া পদক্ষেপ হিসেবে জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছিলেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষুব্ধ উপসচিবরা অবস্থান করছিলেন। তাদের ভাষ্য ছিল– দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে যাবেন না।