একদিনেই কেজিতে বাড়ল ২০ টাকা

পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের শুল্ক আরোপ

জাহেদুল কবির | সোমবার , ২১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চাক্তাইখাতুনগঞ্জে লাগামহীন হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের বাজার। মূলত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের খবরে ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম একদিনের ব্যবধানে কেজি ২০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ ভোক্তারা। তারা বলছেন, ভারত তাদের বাজার ঠিক রাখতে রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাজারে যেসব পেঁয়াজ আছে সেগুলো আগেই আমদানি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুল্ক বৃদ্ধির খবরে বাজারে পেঁয়াজের বেচাবিক্রি বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বেড়েছে।

চাক্তাইখাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৫৪৬ টাকায়। কিন্তু ভারত রপ্তানি শুল্ক আরোপের জেরে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

জানা গেছে, বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি(তাহেরপুরী), বারি(রবি মৌসুম), বারি(খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। ফলে বছর জুড়ে কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করা হয়। আমদানি করা হয় বাকি চার লাখ টন। মূলত এই আমদানিকৃত চার লাখ টন পেঁয়াজ বাজারে বড় প্রভাব ফেলে।

মধ্যম চাক্তাইয়ের এইচ জে ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা কমিশনে পেঁয়াজ বিক্রি করি। পেঁয়াজের আমদানিকারকরা যে দাম নির্ধারণ করেন সেই দামে পণ্য বিক্রি করি। ভারতের শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাবে বাজারে দাম বাড়ছে। চাক্তাই আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল কাশেম বলেন, বাজারে এখন ভারত ছাড়া কোনো অন্য দেশের পেঁয়াজ নেই। বলা যায়, আমরা বর্তমানে ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবে ভারত শুল্ক বাড়ালে এর প্রভাব আমাদের এখানে পড়বে। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত ছাড়া অন্য দেশ থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে হবে। কারণ আমরা শুনেছি, ভারতে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সেই দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়ে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পদ্ধতি আরো সহজ করতে হবে। কারণ বর্তমানে এলসিতে শতভাগ মার্জিন পরিশোধ করতে হচ্ছে। তাই এখন পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে যদি আগের মতো ১০ শতাংশ মার্জিনে এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানিতে আরো বেশি উৎসাহিত হবে। একই সাথে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে দামও কমে যাবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে দেশি পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০০ টাকার উপরে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তখন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় রাতারাতি দাম কমে যায়। কিন্তু এখন ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তের সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে বাজারে যেসব পেঁয়াজ আছে সেগুলো আমদানিতে ৪০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক দিতে হয়নি। এতে পরিষ্কার বোঝা যায়, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম বৃদ্ধি করছেন। তাই প্রশাসনকে বাজারে মনিটরিং নিশ্চিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকলেজে ভর্তিতে উত্তীর্ণের তুলনায় ২৪১৪ জন বেশি শিক্ষার্থীর আবেদন
পরবর্তী নিবন্ধগ্রেনেড হামলা মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়