শুষ্ক মৌসুম হলেও কর্ণফুলী নদীর উজানে একদিকে ভাঙছে, অন্যদিকে বালু উত্তোলনও চলছে সমান্তরালভাবে। শুধু কর্ণফুলী নদী নয়, বালুখেকোদের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না উজানের ইছামতি নদীও। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, কর্ণফুলী ও ইছামতিতে অনেক স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের দৌরাত্ম্য রোধ করা যাচ্ছে না। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, অবৈধ বালু লুটকারীদের বিরুদ্ধে রাতেও অভিযান চলে।
সরেজমিন দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়া সরফভাটা এলাকার গোডাউন ব্রিজের সামান্য উজানে ভাঙছে কর্ণফুলী। যে স্থানে ভাঙছে, তার নিকটেই বড় বাল্কহেডে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এখানকার বালু সিন্ডিকেট কর্ণফুলী ছাড়াও আরো উজানের ইছামতি নদীতেও থাবা বসিয়েছে। বড় বড় বাল্কহেড ও ড্রেজার দিয়ে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুষ্ক মৌসুম হলেও কর্ণফুলীর উজানে লবণাক্তের পরিমাণ একেবারেই কম। সময়ে সময়ে লবণাক্ততা একেবারেই থাকে না। অন্যদিকে ইছামতির পুরোটাই মিঠা পানি। মিঠাপানির বালু হওয়ায় ব্যক্তিগত দালানকোঠা তৈরিতে এখানকার বালুর চাহিদা বেশি। ওই এলাকায় সরকারি বালি মহাল না থাকলেও প্রভাবশালী কয়েকটি গ্রুপ নিয়মিত বালু উত্তোলন করছে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে ভাঙন প্রতিরোধে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিতে হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। স্থানীয় সূত্র বলছে, নগরীর
চান্দগাঁও, বাকলিয়া বাদেও বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া এলাকার কয়েকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট প্রশাসন ম্যানেজ করেই কর্ণফুলীর উজান ও ইছামতি থেকে দিন-রাত বালু উত্তোলন করছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও শক্তিধর সিন্ডিকেটগুলো দমাতে ব্যর্থ হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় সরকারি দলের এক নেতা বলেন, প্রশাসন মাঝেমধ্যে ভলগেট (বাল্কহেড) থেকে শ্রমিকদের ধরে তিন দিন, পাচঁ দিন, সাত দিনের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাছাড়া বাল্কহেডগুলো আটক করলেও সামান্য জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেয়। অথচ এসব বাল্কহেডও সম্পূর্ণ অবৈধ।
এদিকে কর্ণফুলী ও ইছামতির নাব্যতা বাড়াতে ২০১৭ সালে প্রায় দুইশ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্পটি দরপত্র জটিলতায় দীর্ঘসূত্রতায় পড়লেও সম্প্রতি ইছামতি অংশের ৬ কিলোমিটার ড্রেজিং থেকে সরে আসে তারা। কারণ হিসেবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ইছামতি ড্রেজিং করা হলে ভাঙ্গন আরো বাড়বে।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চট্টগ্রাম ডিভিশন-৩) নুরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘কর্ণফুলীর উজানে ও ইছামতি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে দুষ্কৃতকারিরা। অবৈধভাবে বালি উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় অবহিত করেছি।’ শুষ্ক মৌসুমে ভাঙ্গার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলীর একেবারে উজানে বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে পাহাড় থেকে প্রবল স্রোতে বালি নামে। যে কারণে ওইসব এলাকায় নদীর দুইপাশ এবং তলার বেশিরভাগ এলাকার মাটি বালিযুক্ত। ওইসব এলাকা এমনিতে ভাঙ্গন প্রবণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ওইসব এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করেছি। সামনেও ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকায় প্রকল্প নেয়া হবে।’
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান গতকাল আজাদীকে বলেন, ‘গোডাউন ব্রিজের উজানে রাঙ্গুনিয়া অংশে যেখানে অবৈধ বালু উত্তোলন হয়, সেখানে আমাদের অভিযান চলে। কয়েকদিন আগে আমরা পাঁচজনকে ধরে জেলে পাঠিয়েছি। একটি বাল্কহেড ধরে জরিমানা করা হয়েছে। গতমাসেও আমরা দুইজনকে জেলে পাঠিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বড় একটি গ্যাং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কাজটি করে। যে কারণে তাদের ধরা যাচ্ছে না। তারা বোয়ালখালী অংশ থেকে এসে এই কাজটি করে।’