সারাদিনের কাজ কর্মের পর নিজের জন্য আর সময় থাকে না। সবার সব দাবী আবদার মিটিয়ে, নিজের জন্য আর কোনো আবদার অবশিষ্ট থাকে না। এভাবেই দিন যায়, সপ্তাহ, মাস, বছর যায়, কে জানে হয়তো কারো কারো জীবনই এভাবে কেটে যায়! শরীরে উদ্যম থাক বা না থাক সময় মতো অফিসের কাজগুলো ঠিক গুছিয়ে দেয়া হয়,, রান্না করতে ইচ্ছে করুক না করুক পরিবারের সদস্যদের জন্য করতেই হয়, সারাদিনের ক্লান্তি নিয়েও অন্য একজনের জন্য চা বানিয়ে দেয়া যায় কিন্তু নিজের জন্য সময় মতো খাবার খেতেও যাওয়া হয় না। নিজের জন্য একটা ডিম সেদ্ধ করে খাওয়াটা যেন বিশাল এক কাজ! এক কাপ দুধ সে তো অনেক বাড়তি! দুটো কাজু বাদাম, আখরোট বা তিল তিসি– জোগাড় করাও ঝামেলা! রূপচর্চা বাদই থাক, সুস্থতার জন্য পাঁচ মিনিট যোগাসন কিংবা দু‘মিনিট প্রাণায়াম করার সময় হয় না। কারো কারো অবশ্য হয় কিন্তু সুস্থ অবস্থায় নয়, অসুস্থ হবার পরে যখন ডাক্তার বা ফিজিওথেরাপিস্ট নিয়ম বেঁধে দেন। কারো হয়তো সময় হয় জীবন থেকে বেরিয়ে যাবার পর – একেবারে অখণ্ড অবসর। কিন্তু বেঁচে থাকতে হয় না কেন? কেন ২৪ ঘণ্টার মাঝ থেকে কয়েকটি মিনিট নিজের হয় না? একে কি নিজের প্রতি অনীহা, অবহেলা বলে? নাকি সেল্ফ লাভের অভাব? নাকি চাপা কোন অভিমানের বহিঃপ্রকাশ? কার প্রতি অভিমান, কেন অভিমান? আমি নিজেই নিজেকে গুরুত্ব দিচ্ছি না, নিজের জন্য কিছু করছি না, আশা করছি অন্য কেউ আমার জন্য করে দেবে? If I don’t love myself why anyone does? সে যাই হোক এ যে হঠকারিতা তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে সময় অন্য কারো কেয়ার নিতে, অন্যকে সন্তুষ্ট করতে, অন্যকে ভালোবাসতে ব্যয় করি তা থেকে একটু সময় নিংড়ে বের করে নিই যদি তাহলেই আর আক্ষেপের জায়গা থাকে না। সারাজীবন শুধু অন্যের জন্য করেই গেলাম, কলুর বলদের মতো খেটেই গেলাম কিচ্ছু পেলাম না, কেউ আমার দুঃখ বুঝলোনা এরকম মনের অবস্থাও তৈরি হয় না। জীবনটা আমার তো এর ভালো মন্দের দায় দায়িত্বও আমাকেই নিতে হবে। আমাকে আমারই কেয়ার করতে হবে। আমরা কেউ কি বলতে পারবো চব্বিশ ঘণ্টার চেয়ে বেশি সময় দিনে পেয়েছি? চব্বিশ ঘণ্টা আমার জন্যও, আমার বাড়ির সামনের ভিক্ষুকের জন্যও, পাড়ার মোড়ে দিনভর অলস আড্ডায় মেতে থাকা বেকার ছেলেটার জন্যও আবার ইলন মাঙের জন্যও একই সময় বরাদ্দ। এর বেশি আমরা কেউ পাবো না। না এই এক জীবনে আরেকটা সুযোগ পাবো নিজেকে যত্ন করার জন্য। তাই যা করার এই চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই করতে হবে। Time is LIFE কথাটা মাথায় রাখতে হবে। এক একটা সেকেন্ড এখানে জীবনের একক। তাই প্রতি চব্বিশ ঘণ্টার একটা নির্দিষ্ট পারসেন্ট শুধু আমার। কম হোক, বেশি হোক তা হতে হবে নিয়মিত। নিজের জন্য একটা ‘গুড হ্যাবিট’, নিজের জন্য দু‘টো ‘মোটিভেশনাল কথা’, একটু ভালো চিন্তা, নিজের জন্য একটু যত্ন, নিজের জন্য একটা খাতা–কলম, একটা দু‘টো ভালো বই, শুধু নিজের জন্য একটা ভালো উদ্যোগ হয়ে উঠতে পারে জীবন বদলের হাতিয়ার, ভালো থাকার চাবিকাঠি। জীবন যেমনই হোক, যেখানেই থাকি, যে অবস্থায় থাকি– পরিতৃপ্তি নিয়ে বাঁচি। ভালোবেসে বাঁচি। ‘When you love yourself, the universe will just miror back to you.’ So… Love yourself unconditionally, truely, madly, deeply.