একটি সেতুর জন্য ৫৪ বছরের অপেক্ষা

কৈখাইন নোয়ারাস্তা-বাকখাইন ঘাট

এম. নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | শনিবার , ১ মার্চ, ২০২৫ at ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ

নদীর এপারে আনোয়ারার কৈখাইন, ওপারে পটিয়ার বাকখাইন। বাকখাইন গ্রামের একটি অংশকে দুইভাগ করেছে শিকলবাহা খাল। আত্মীয়তা, সামাজিক মেলবন্ধন থাকলেও কর্ণফুলীর এ শাখা খালটি ভাগ করে দিয়েছে দুই পাড়ের মানুষকে। ৫৪ বছর ধরে দুই পারের লক্ষাধিক মানুষ শুধু সেতুর কথাই শুনেছে। স্বপ্ন আর বাস্তবতায় ধরা দেয়নি।

ছোট কয়েকটি নৌকা তাদের যাতায়াতের ভরসা। আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলার বিশাল অংশের মানুষের দাবি দ্রুততার সাথে বাকখাইন ও কৈখাইনের নোয়ারাস্তা এলাকায় শিকলবাহা খালের উপর নির্মিত হোক কাঙ্ক্ষিত সেতু।

কৈখাইন নোয়ারাস্তাবাকখাইন ঘাট আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের পথ। ৯০ দশকের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতের জন্য এটি বাকখাইন লঞ্চ বা স্টিমার ঘাট নামে পরিচিত ছিল। কালের বিবর্তনে শিকলবাহা খালের এই ঘাটে এখন লঞ্চ বা স্টিমার চলাচল না করলেও স্বাধীনতার পরবর্তী ৫৪ বছরেও দুই পাড়ের যোগাযোগের সেতু বন্ধন রক্ষায় এখনো এই ঘাটে নৌকাই একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে আনোয়ারা ও পটিয়া উপজেলার সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও হুইপ দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে শিকলবাহা খালের এই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণে বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কার্যত ব্রিজ নির্মাণের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের আক্ষেপস্বাধীনতার ৫৪ বছর পর ব্রিজ নির্মিত না হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের মানবতার জীবনযাপনের নিত্য দিনের চিত্র যেন দেখার কেউ নেই। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বর্তমান সরকারের কাছে এলাকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর একটাই দাবি-‘নোয়ারাস্তা বাকখাইন ঘাটে ব্রিজ নির্মাণের আর প্রতিশ্রুতি শুনতে চাই না, এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’

সরেজমিনে এই ঘাটে গিয়ে জানা যায়, নোয়ারাস্তাবাকখাইন ঘাটটি স্বাধীনতার পূর্ববর্তী কাল থেকে ৯০ দশকের আগ পর্যন্ত দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম নৌ ঘাট হিসেবে পরিচিতি ছিল। তখন এ ঘাট দিয়ে এ অঞ্চলের মানুষ লঞ্চ, স্টিমার আর সাম্পান যোগে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়ত করত। কালেরবিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলেও এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। লঞ্চস্টিমার বিলুপ্তি হয়ে গেছে। এখন আর লঞ্চ ঘাট নেই, রয়ে গেছে যোগাযোগের একমাত্র বাহন হিসেবে কয়েকটি সাম্পান। কালের সাক্ষী হয়ে এই ঘাটে যোগাযোগের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে। স্থানীয় কৈখাইনের বাসিন্দা মো. আমির, আবদুল মালেক, মো. দেলোয়ার, মো. বেলাল, মো. কালু মাঝি, বাঁকখাইন গ্রামের মো. হাশেম মাঝিসহ কয়েকজন মাঝি এখনো এ ঘাটে রয়ে গেছেন।

বাকখাইন মল্লিক পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী শুভন মল্লিক জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী ৫৪ বছরেও আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমরা আনোয়ারায় অবস্থান করলেও সরকারি গেজেটে আমরা খালের ওপারের বাকখাইন ইউনিয়নের বাসিন্দা। যার কারণে আমরা সর্বক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত। আমারা যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ধরনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নৌকা দিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করি। বর্ষাকালে আমাদের দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। দীর্ঘকাল থেকে আমরা এখানে একটা ব্রিজের স্বপ্ন দেখি। এটা আমাদের প্রাণের দাবি। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সরকার আসলো আর গেল। বারবার নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু আমাদের স্বপ্নের ব্রিজ অধরা রয়ে গেল। বর্তমান বৈষম্যবিরোধী সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি অতি দ্রুত যেন একটি ব্রিজ নির্মাণের ব্যবস্থা নেন। তা দুই পাড়ের লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপজ্জনকভাবে সরে গেছে ডাউন অংশের মাটি
পরবর্তী নিবন্ধঅস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও পরিকল্পনা, নগরে গ্রেপ্তার ৪৫