চট্টগ্রাম বন্দরের পনের বছর আগের একটি সার্কুলার প্রত্যাহার করা হলে কোটি কোটি ডলার সাশ্রয় হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে হ্যান্ডলিং করা কন্টেনারের চার্জের একটি অংশ ফ্রেইটের সাথে বিদেশে চলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের প্রচলিত একটি ধারা রোধ করে ১৫ বছর আগে জারিকৃত এক সার্কুলারের কারণে ডলার বিদেশে চলে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনসহ একাধিক সংস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরে বছরে ৩০ লাখ টিইইউএস–এর বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়। গত বছরে ৩২ লাখ টিইইউএস–এর চেয়ে বেশি কন্টেনার হ্যন্ডলিং হয়েছে। এরমধ্যে এমটি কন্টেনার বাদে আমদানি এবং রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেনার হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে টার্মিনাল হ্যান্ডলিং চার্জ (টিএইচসি) নামে একটি চার্জ আদায় করা হয়। প্রতি টিইইউএস কন্টেনারের জন্য ৪৩.৪০ সেন্ট এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট মিলে সর্বমোট ৪৯.৯১ ডলার চার্জ আদায় করা হতো। বছরের পর বছর ধরে এই চার্জ শিপিং এজেন্টরা বাংলাদেশি মুদ্রায় আদায় করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতো। কিন্তু ২০০৭ সালে যৌথবাহিনী বন্দর সংস্কার করার সময় ১৬ এপ্রিল ২০০৭ সার্কুলার নম্বর– ০৩/০৭ জারি করে। এতে টিএইচসি স্থানীয়ভাবে না নিয়ে ফ্রেইটের সাথে আদায় করার নির্দেশনা দেয়া হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষের এই সার্কুলারের ফলে স্থানীয়ভাবে শিপিং এজেন্টেরা টিএইচসি আদায় বন্ধ করে দেয়। এই চার্জ ফ্রেইটের সাথে যুক্ত হয়ে বিদেশে চলে যেতে থাকে। অর্থাৎ চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যবোঝাই এক কন্টেনারের ভাড়া আগে যখন ১ হাজার ডলার আদায় করা হতো, উক্ত সার্কুলারের পর টিএইচসি ফ্রেইটের সাথে আদায় হওয়ায় ভাড়া হিসেবে পরিশোধিত হতো ১ হাজার ৫০ ডলার। এই টাকা ডলারে পরিশোধিত হয়ে বিদেশ চলে যায়। যা আর চট্টগ্রামে ফেরত আসে না। এভাবে লাখ লাখ কন্টেনারের হ্যান্ডলিং চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে প্রতিবছর।
অপরদিকে রপ্তানির ক্ষেত্রেও টিএইচসি হিসেবে প্রচুর ডলার বিদেশে দেশে আনার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির সময় রপ্তানিকারকেরা স্থানীয়ভাবে টিএইচসি পরিশোধ করলে বিদেশি ক্রেতাকে তার পক্ষ থেকে টিএইচসি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে প্রতি কন্টেনারে ৫০ ডলার ফেরত আনতে পারতো। গার্মেন্টস রপ্তানিকারকেরা এই টাকা স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করলেও বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আনতে পারতো বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো উল্লেখ করে বলেছেন যে, টিএইচসি স্থানীয়ভাবে স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধের সুযোগ তৈরি হলে প্রতি কন্টেনারেই ৫০ ডলার করে সাশ্রয় হতো।
ডলার সংকটের এই সময়ে লাখ লাখ ডলার অহেতুক বিদেশে চলে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে একাধিক শিপিং এজেন্ট বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। শুধু সার্কুলারটি প্রত্যাহার করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গত ৮ জানুয়ারি বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবরে বিষয়টির বিস্তারিত উল্লেখ করে একটি পত্র দেয়া হয়েছে। এর আগে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডদের পক্ষ থেকেও একইভাবে পত্র দেয়া হয়। যাতে টিএইচসি স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করা হলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিষয়টি খুবই টেকনিক্যাল। এক কথায় বলে দেয়ার মতো নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে বোর্ডে আলাপ আলোচনা করে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।