রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া–বর্মাছড়ি–লক্ষীছড়ি সড়ক নির্মিত হওয়ার ফলে বদলে গেছে এলাকার মানুষের জনজীবন। দুর্গম এলাকায় এই সড়কটি নির্মিত হওয়ার আগে এখানকার মানুষকে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পায়ে হেঁটে নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে হতো। আর বর্তমানে এখানকার মানুষ স্বল্প সময়ের মধ্যে গাড়িতে করে বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজার থেকে শুরু করে উপজেলা সদরেও পৌঁছাতে পারছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই সড়কটি নির্মিত হওয়ায় এখানকার মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এই দৃষ্টিনন্দন সড়কটি এখানকার মানুষের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ট্যুরিস্টদেরও আকৃষ্ট করেছে। প্রতিদিন শত শত মানুষ মোটর বাইক, সিএনজি টেক্সি যোগে নিয়ে এই সড়কে প্রকৃতি উপভোগ করতে আসেন। রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির কাউখালীর বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজার–বর্মাছড়ি খাগাছড়ির লক্ষীছড়ি পর্যন্ত সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩১ কিমি। এর মধ্যে সড়কটির ১০.৫০ কিমি পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে। সড়কের উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। এই সড়কটির ৩১ কিমি পর্যন্ত নির্মাণ করা গেলে খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ি হয়ে মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে খুব সহজে।
এদিকে, বেতবুনিয়া বর্মাছড়ি সড়কে চট্টগ্রাম থেকে মোটর বাইক নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটক পংকজ বলেন, সবুজ পাহাড়ের ভাজে ভাজে যে প্রকৃতি লুকিয়ে আছে তা এই সড়কে এসেই তার প্রমাণ পেলাম। একপাশে সবুজ পাহাড় আর একপাশে নীল আকাশে মেঘের খেলা তা অত্যন্ত সুন্দর। যা দেখে আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি।
রাঙামাটি থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক মো. সাইফুল বলেন, সড়কটিতে ঘুরতে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। এই সড়কটির নান্দনিক সৌন্দর্য্য আমাকে খুবই আকৃষ্ট করেছে। রাঙামাটি শহরের এবং বাহিরের পর্যটকদের বলব আপনারাও একবার এসে ঘুরে যেতে পারেন এই সড়কে।
বেতবুনিয়ার এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন বলেন, এই এলাকায় ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এই সড়কটি হওয়ার আগে এখানকার স্কুল পড়ুয়া ছাত্র–ছাত্রীরা প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করে উচ্চ বিদ্যালয়ে যেতে পারতো না রাস্তা না থাকার ফলে। বর্তমানে সড়কটি হওয়ায় এখানকার মানুষ অত্যন্ত উপকৃত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় এবং রাঙামাটির বর্তমান সাংসদ দীপংকর তালুকদারের প্রচেষ্টায় এই রাস্তাটি নির্মিত হয়েছে।
বেতবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা পাইসা মরমা বলেন, এই সড়কটি হওয়ার ফলে এখানকার অনগ্রসর মানুষদের জন্য অনেক উপকার হয়েছে। রাস্তাটি নির্মাণ হওয়ার ফলে এখানকার ছেলেমেয়েরা স্কুল–কলেজে যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানকার মানুষকে এখন পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে হচ্ছে না। সিএনজি টেঙি, মোটরবাইক ও চাঁদের গাড়িতে করে সহজে যাওয়া আসা করতে পারে। তিনি বলেন, এখানকার কৃষকরা জুমের ফসল নিয়ে বাজারে বিক্রয় করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে।
বেতবুনিয়া–বর্মাছড়ি সড়কের চৌধুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা ও রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী থুইমাচিং মারমা বলেন, রাস্তাটি কাঁচা থাকা অবস্থায় আমাদের কলেজে যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হতো। এখান থেকে পায়ে হেঁটে বেতবুনিয়ার চায়েরী বাজার পর্যন্ত যেতে হত। আর এখন সিএনজি টেঙি করে ১০–১৫ মিনিটের মধ্যে বেতবুনিয়ায় যাতায়াত করতে পারছি।
চৌধুরীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাচিং প্রু বলেন, এই রাস্তাটি হওয়ার ফলে আমরা দীর্ঘদিনের সীমাহীন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেয়েছি। এতে করে আমাদের কৃষিপণ্য নিয়ে খুব সহজে বাজারে বিক্রয় করতে পারছি। এর ফলে আমাদের উৎপাদিত শাক সবজিগুলোর ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।
রাঙামাটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, বেতবুনিয়া–বর্মাছড়ি–লক্ষীছড়ি সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩১ কিমি। এর মধ্যে সাড়ে ১০ কিমি সড়ক আমরা পাকা করেছি। খুবই দুর্গম একটা জায়গায় রাস্তাটিকে পাকা করতে হয়েছে। আগে এলাকার লোকজনের চলাচলে অনেক কষ্ট হতো। এই সড়কটি হওয়ার ফলে এখানকার মানুষেরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজে বাজারজাত করতে পারছে। তিনি বলেন, এই সড়কটিতে বর্তমানে প্রচুর ট্যুরিস্ট ভ্রমণে আসে পার্শ্ববর্তী উপজেলা রাউজান থেকে। এই সড়কটি সম্পন্ন করতে পারলে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ও খাগড়াছড়ির লক্ষীছড়ির সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।