একটি ভ্যানের স্বপ্ন

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

সংসারের চাকা ঘুরাতে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ভ্যানের চাকা ঘুরাতে হয় শাহেনাকে। দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করতে হয় বিস্কুট-চানাচুরসহ নানা বেকারি পণ্য। দিনভর নানাভাবে কসরত করে দুই বিবাহযোগ্য কন্যাসহ নিজের সংসারের খরচের সংস্থান করতে হয় তাকে। দিনের পর দিন এভাবে চলছে শাহেনার জীবন, এভাবে ঘুরছে তার ভাড়া করা ভ্যানের চাকা। নিজের একটি ভ্যানের স্বপ্ন নানা অসুখ-বিসুখের কারণে অধরা থেকে গেছে। শাহেনার বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোট। স্বামী সরুত আলী রেলের চাকরি করতেন। এই সুবাদে বসবাস চট্টগ্রামে। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে স্বামী মারা যান। সোনিয়া এবং তানজিনা নামের দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে অকুল সাগরে পড়ে যান শাহেনা। কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। অতপর শুরু করেন ব্যবসা। ক্ষুদে ব্যবসায়ী হলেও নিজের মতো করে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার একটি পথ খুঁজে পান। পাহাড়তলী এলাকার আবু বেকারির বিস্কুটসহ নানা পণ্য বিক্রি করেন তিনি। আবু বেকারি থেকে দৈনিক একশ টাকা ভাড়ায় একটি ভ্যান সংগ্রহ করেন। ওই ভ্যানে বেকারি থেকে ছয়-সাত হাজার টাকার বিস্কুট, পাউরুটি, চানাচুরসহ নানা পণ্য কিনে নেন। এসব নিয়ে ভোর থেকে নগরীর বিভিন্ন দোকানে দোকানে বিক্রি করতে থাকেন। ভোর পাঁচটা থেকে বেলা দশটা পর্যন্ত পণ্য সরবরাহ দেন এবং বিকেল চারটার পর গিয়ে টাকা তুলে আনেন। ইতোমধ্যে নগরীর বিভিন্ন দোকানে তার ১৭ হাজার টাকার মতো বকেয়া আটকা পড়েছে।
শাহেনার দুই মেয়েই বিবাহযোগ্য। তারা দুজনই ইউসেফ স্কুলে দশম শ্রেনীতে পড়ে। বাসায় থাকে। পাহাড়তলী ভেলুয়ারদীঘির উত্তর পাড়ে রেলওয়ে কোয়ার্টারের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন তারা। ভাড়া সাড়ে ছয় হাজার টাকা। খরচ সাশ্রয় করতে পরিচিত এক গার্মেন্টস কন্যাকেও সাথে রেখেছেন।
ব্যবসা কিছুটা বড় এবং নিজের একটি ভ্যানের জন্য শাহেনা স্থানীয় আয়েশা সমিতি থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ১১শ’ টাকা করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। ঋণ নিলেও আচমকা অসুখে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসায় বেশ কিছু টাকা খরচ হয়ে যায়। তার ভ্যান কেনা হয়ে উঠে না। এখন কিস্তির টাকা যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অবশ্য ইতোমধ্যে তিনি ১১ কিন্তি পরিশোধ করেছেন। আরো ২৯ কিন্তি পরিশোধ করতে হবে।
দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে শাহেনা জানান, দৈনিক ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বেকারি পণ্য বিক্রি করেন তিনি। ছয়শ টাকার মতো ব্যবসা থাকে। এই টাকা দিয়েই তাকে সংসারের চাকা ঘুরাতে হয়। নিত্য অভাবের মাঝেও দুই কন্যাকে নিয়ে সম্মানের সাথে বেঁচে রয়েছেন এটাই তার বড় শান্তনা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শাহেনা স্বপ্ন দেখেন নিজের একটি ভ্যান হবে। যে ভ্যানের চাকা ঘুরানোর স্বস্তির সাথে তিনি কিছুটা স্বস্তিতে সংসারের চাকাও ঘুরাতে পারবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের হাতাহাতি, মধ্যরাতে উত্তেজনা
পরবর্তী নিবন্ধগাড়িতেই মাথা ঘুরে পড়ে যান পরীমনি