একটি ফুলের হাসি

সুজন সাজু | বুধবার , ১৩ মার্চ, ২০২৪ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

খেলাধুলাতেই মন বেশি স্নিগ্ধার। পিছে পিছে দৌড়ে ছোট ভাই সুমিষ্টও। স্নিগ্ধা যা করে, যেমন খেলে সুমিষ্টও অনুকরণ করে সবই। ভাই বোন মিলে মিশে সারাক্ষণ খেলে আবার ঝগড়া ঝাটিতেও পিছিয়ে নাই। এই ঝগড়া তো এই ভালো।

বেশির ভাগ ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটায় ভাই সুমিষ্টই। ভায়ে কোন রকম আঘাত করলেও স্নিগ্ধা খুব সহজে আঘাত ফিরিয়ে দেয় না। আদরের ছোট ভাই হিসেবে সহ্য করে সব। বিচার দেয় এসে মাকে, মা ভাইয়া আমাকে মেরেছে। মা সান্ত্বনা দেয় আমি ওকে মারবো। এই টুকুতেই শেষ।

কিছুক্ষণ পর আবার খেলছে ভাই বোন। এটাই নিত্য দিনের দৃশ্য। যখন পড়তে বসে খুনশুটিতে ব্যস্ত থাকে ভাইবোন। মা যখন শাসনের সুরে ডাক দেয়, দুজনেই মন বসায় পড়াতে। কখনো কখনো ভাই বোন মিলে মনের ইচ্ছে মতো ছবি আঁকে। কে কত সুন্দর আঁকতে পারে ভাই বোনর মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। ছবি এঁকে মাকে দেখায়। মা দুজনকেই বলে সুন্দর হয়েছে। খুশি হয় দুজনেই।

এখন মার্চ মাস। জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে স্কুলে অনুষ্ঠান হবে।

স্কুুলের প্রধান শিক্ষক অভিভাবকদের ডেকে জানিয়ে দিল, অভিভাবক সহ অনষ্ঠানে সকলকে অংশগ্রহণ করার জন্য। উপস্থিত থাকবেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানে ছাত্র ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করতে পারবে। নাচ, গান,আবৃত্তি, চিত্রাংকন, উপস্থিত বক্তৃতা ইত্যাদি। এসবের বিষয় হতে হবে দেশ ও জাতির পিতাকে উদ্দেশ্য করে। স্নিগ্ধা পঞ্চম শ্রেণীতে, ভাই সুমিষ্ট একই স্কুলে নার্সারীতে অধ্যায়নরত। দুদিন পরেই অনুষ্ঠান।

স্নিগ্ধা নাম জমা দেয় গান ও চিত্রাংকনে। সুমিষ্ট আবৃত্তি ও চিত্রাংকনে। এই দুদিনে যে যার মতো করে প্রস্তুতি নেয়। ওদের ঘরের দেয়ালে ঝুলছে একটি ক্যালেন্ডার। ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন পাতায় শোভা পাচ্ছে জাতির পিতার ছবি সহ কিছু মনকাড়া ছবি। ছবিগুলো দেখেই ভাইবোন অনুপ্রাণিত হয়। স্নিগ্ধা আঁকবে লাল সবুজের মাঝখানে জাতির পিতার ছবি। সুমিষ্ট এখনো ভালো করে আঁকতে পারে না। কিন্তু বোনের দেখাদেখি বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকতে চেষ্টা করে। দেয়ালের ছবি দেখিয়ে মাকে বলে মা আমি এমন করে আঁকব। মা বলে আঁকতে পারলে আঁকো। চেষ্টা করে আঁকতে। না পারলে মাকে ডাক দেয়, মুখ কালো করে বলে মা দেখিয়ে দাও না। মা কি আর ছবি আঁকতে পারে? তবুও ছেলের জোরাজুরিতে চেষ্টা করে। এই দুদিনে অনেক গুলো খাতার পাতা রঙ পেন্সিলে ভরিয়ে তুলছে ভাইবোন। রাত পার হলেই সকালে স্কুলের অনুষ্ঠান।

ভাইবোনের যেন তর সইছে না কখন সকাল হবে। পরদিন যখন পাখির কূজনে ভোরের আগমন হয়, ভাইবোন প্রস্তুত হয়ে যায় স্কুলে যাবার উদ্দেশ্যে। মাও ঘরের কাজ কর্ম সেরে দুজনকে নিয়ে রওনা দেয় স্কুলে। স্কুলে এসে অভিভাবকরা প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট স্থানে ছেলেমেয়েদের বসিয়ে দিচ্ছে। কারণ মূল অনুষ্টানের আগে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা শুরু হবে। রং পেন্সিল, সহ প্রতিযোগিরা আলাদা আলাদা কক্ষে অপেক্ষারত, তখন ম্যাডাম ও স্যারেরা এসে হাজির। সবার হাতে একটি করে আর্ট পেপার দিয়ে দিল ম্যাডাম।

ঘন্টা পড়ার এখনো পাঁচ মিনিট বাকি। ম্যাডাম জিগ্যেস করে তোমরা প্রস্তুত? সবাই হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। ঘন্টা পড়ল এমন সময়। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে রং পেন্সিল নিয়ে। সময় মাত্র ত্রিশ মিনিট। দেখতে দেখতে ঘড়ির কাটা ত্রিশ মিনিটের ঘরে পৌঁছে গেল। সবাই লাইন ধরে জমা দেয় আঁকা আর্ট পেপার গুলো।

ধারাবাহিকভাবে সব প্রতিযোগিতা শেষে শুরু হলো মূল অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তারা জাতির পিতার নানাদিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করে, জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হওয়ার আহ্বান জানায়। এবার প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণার পালা। সঞ্চালক প্রথমেই ঘোষণা করলেন নার্সারীর প্রতিযোগীদের নাম। প্রথম স্থান অর্জন করেছে ‘একটি ফুলের হাসি’ প্রতিযোগির নাম সুমিষ্ট। রোল নাম্বার পাঁচ। নাম শুনে সুমিষ্ট হাসে, সাথে মাও।

সুমিষ্ট এঁকেছে একটি ফুটন্ত গোলাপের মাঝে জাতির পিতার একটি হাসি মাখা মুখ। যেন ফুলটাই হাসছে। তাই শিরোনাম দিল, একটি ফুলের হাসি। এই ছোট্ট বয়সে মুজিবের প্রতি ভালোবাসার ছবি আঁকার চেষ্টা এটাই মুগ্ধ করেছে বিচারকদের। স্নিগ্ধাও গানে পেয়েছে দ্বিতীয় পুরস্কার। অনুষ্ঠান শেষে ভাইবোনও হাসি মুখে বাড়ির পথ ধরে মায়ের সাথে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের ইলিশ উৎপাদন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে
পরবর্তী নিবন্ধজাতির পিতা