একটি ছড়ায় পাঁচ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ

যুবকদের উদ্যোগে নির্মিত হলো সাঁকো

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি | শনিবার , ১৫ জুন, ২০২৪ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সর্পিলাকার তৈচাকমা ছড়া রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর ইউনিয়নের পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে বিপন্ন করেছে। এই ছড়াটির কারণে সদর ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের মানুষের ছড়া পার হয়ে করতে হয় যাতায়াত। বিশেষত স্কুলকলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় স্থানীয়দের। পাঁচ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে ছড়ার ওপর চারটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে গ্রামের যুবকদের গড়ে তোলা রাঙ্গিপাড়া যুব কজমা ক্লাব। এতে করে সাময়িক যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও টেকসই উদ্যোগ গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।

রাঙামাটির জেলা শহর থেকে ৪০৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নানিয়ারচর উপজেলার নানিয়ারচর ইউনিয়নের এই পাঁচটি গ্রাম। ইউনিয়নের ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত তৈচাকমা মুখপাড়া, রেগাছড়া, রাঙ্গিপাড়া, হেডম্যান পাড়া ও দোষর পাড়া গ্রামের হাজারো মানুষকে প্রতিদিন তৈচাকমা ছড়া পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। পাঁচটি পাড়ার ভৌগলিক অবস্থান উপজেলার সদর ইউনিয়নে হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা কেবল পাহাড়ি হাঁটা পথ। সড়কের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা রাঙামাটিখাগড়াছড়ি আঞ্চলিক সড়কের সতেরো মাইল এলাকার সঙ্গে। বর্ষা মৌসুমে চেঙ্গী নদীর পানি বাড়লে নৌপথে উপজেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াত ব্যবস্থা কিছুটা সহজ হয়। বাকি সময়টাতে চলাচল করতে হয় হাঁটা পথেই। পাঁচ গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে যাতায়াত ব্যবস্থার এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়ে স্কুলকলেজে যান শিক্ষার্থীরা।

চলতি জুন মাসে গ্রামের মানুষের যাতায়াত সুবিধার্থে তিনটি বাঁশের সাঁকো নতুনভাবে তৈরি ও একটি পুরাতন সাঁকো সংস্কারের উদ্যোগ নেয় রাঙ্গিপাড়া যুব কজমা ক্লাব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাঙ্গিপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লাবের সদস্যরা বাঁশের সাঁকো তৈরির কাজ করছেন। ইতোমধ্যে দুইটি সাঁকো তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাঁকোগুলো তৈরি করা হয়েছে উঁচু ও খুঁটিবিহীন। যাতে করে বর্ষা মৌসুমে ছড়ায় পানি বাড়লেও সাঁকোর নিচ থেকে নির্বিঘ্নে পানি চলাচলে ব্যাহত না হয় এবং সাঁকো ভেঙে না যায়। আরেকটি সেতু সংস্কার করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছে ক্লাব সদস্যরা।

ওই এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী হিমা চাকমা ও কলেজ শিক্ষার্থী অন্বেষা চাকমা বলেন, বর্ষাকালে আমাদের বিদ্যালয়েকলেজে যেতে বেশি কষ্ট হয়। ছড়াতে পানির স্রোত না থাকলেও পা পিছলে পড়ে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। এখন গ্রামের ক্লাবের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরি করায় কিছুটা দুর্ভোগ কমবে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

রাঙ্গিপাড়া যুব কজমা ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইমন চাকমা ও সভাপতি রনা বিকাশ চাকমা বলেন, আমরা ক্লাব সদস্যদের ব্যক্তিগণ উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। গ্রামের এক বাসিন্দা আমাদের সব বাঁশ দিয়েছে বিনামূল্যে। এছাড়া বিভিন্নজন সহযোগিতা করছেন। বাঁশের সাঁকো তৈরি হওয়ায় গ্রামের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে কয়েকবছর আগে তৈচাকমা ছড়ায় সরকারি উদ্যোগে ছোট একটি ব্রিজ করা হলেও সেটি ছড়ার ঢলের পানিতে ভেঙে গেছে। টেকসইভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা না গেলে গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ শেষ হবে না।

নানিয়ারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ও ক্লাবটির উপদেষ্টা উদাস চাকমা বলেন, তৈচাকমা ছড়াটি চেঙ্গী নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছড়ায় ঢল নামে। তখন গ্রামের মানুষেরা পানিবন্দি হয়ে পড়েন। এক পাশে চেঙ্গী নদী, আরেকদিকে ছড়ার কারণে গ্রামবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েন। তখন এখানকার মানুষের খুব দুর্ভোগ দেখা দেয়। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না, শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে আসতে না পারায় বিদ্যালয়ও বন্ধ থাকে।

এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি পদ্মসুর চাকমা বলেন, এই গ্রামের শিক্ষার্থীরা তৈচাকমা হেডম্যান পাড়া জুনিয়র হাইস্কুল ও হেডম্যানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে থাকে। পাহাড়ের এই পশ্চাৎপদ এলাকাটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। হাঁটাচলা করার মতো এখনো কোনো ভালো রাস্তা নেই। পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে পাঁচটি গ্রামসহ আশপাশের মানুষের বাজারে যেতেআসতে হয়। শিক্ষার্থীদের স্কুলকলেজে যেতে হয়। আমরা স্থায়ীভাবে ব্রিজ তৈরির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই।

এদিকে, নানিয়ারচর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান বাপ্পী চাকমা বলেন, উপজেলাটির মধ্যে নানিয়ারচর সদর ইউনিয়ন একটি দুর্গম ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে এমন দুর্গম এলাকা আছে যেখানে পায়ে হেঁটে চলার রাস্তা আছে কেবল। রাঙ্গিপাড়ার এই এলাকাতে পাড়ার মাঝখান দিয়ে একটি ছড়া প্রবাহিত হওয়ায় মূল সড়ক থেকে এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন। এ রাস্তাগুলো তৈরি করা অতীব জরুরি। গ্রামের ক্লাবের সদস্যরা স্বেচ্ছায় যে সাঁকো তৈরি করছে যেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা সরকারিভাবেও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কিংবা এমপি মহোদয়ের কাছ থেকেও যেন আমরা ব্রিজগুলো পাই সেই চেষ্টা করব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিকলবাহায় আনসার আল ইসলামের গোপন বৈঠক, দুই সদস্য আটক
পরবর্তী নিবন্ধবৃষ্টি বিদায় করে দিল পাকিস্তানকে, সুপার এইটে যুক্তরাষ্ট্র