একটি কাঠের সেতু আর ৬০ বছরের অবহেলা

বোয়ালখালী প্রতিনিধি | রবিবার , ১২ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই জোড়াতালি দেয়া একটি কাঠের সেতু দিয়ে চলাচল করে আসছে বোয়ালখালী পৌরসভা ও শাকপুরা ইউনিয়নের দুই পাড়ের মানুষ। পৌরসভার পশ্চিম গোমদণ্ডী ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রায়খালী ঘাটকুলের এই কাঠের সেতু দিয়ে দৈনিক চার হাজারের বেশি মানুষ যাতায়াত করে বলে দাবি এলাকাবাসীর। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই এলাকাবাসী লোহা, কাঠ ও টিনের শিট দিয়ে এই সেতুটি তৈরি করে। এরপর দেশ স্বাধীন হল, সরকার বদল হল অনেক, সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে টানা ১৫ বছর। কিন্তু সেতুটি রয়ে গেছে আগের মতই, তার কোনো অগ্রগতিই হল না বলে আফসোস ঝরে ঝরে পড়ে এখানকার মানুষদের।

এলাকাবাসীর দাবি, সম্প্রতি সেতুটি জরাজীর্ণ ও আশঙ্কাজনক হলে সরকারিভাবে সহায়তার জন্য দপ্তরে দপ্তরে ঘুরলেও কোনো সুফল পাননি তারা। পরে নিজেরা চাঁদা তুলে সেতুটি সংস্কার করেন। সেতুতে কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় যাতায়াতের সময় খালে পড়ে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা।

জানা যায়, কাঠের এই সেতুটি পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সঙ্গে শাকপুরা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডকে সংযুক্ত করেছে। এর উভয় পাশে রয়েছে শিল্প কারখানা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একপাশে রয়েছে জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, ইটভাটাসহ কয়েকটি শিল্প কারখানা। রয়েছে পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাজী ছবের আমিন দাখিল মাদ্রাসা। ফলে কারখানার কর্মকর্তাকর্মচারী, স্কুলমাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী, মসজিদে যাতায়াতকারী মুসল্লিদের একমাত্র ভরসা এই সেতুটি।

পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, শাকপুরা ইউনিয়নের অনেক শিক্ষার্থী পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে। তাদেরকে এই বিপজ্জনক সেতু পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। তানজিনা আকতার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সেতু পার হয়ে স্কুলে যায়। বেশ ভয় লাগে পার হতে। কারণ সেতুতে কোনো নিরাপত্তা নেই। কোনো ছাত্রছাত্রী যদি খালে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে এর দায়ভার কে নেবে? স্থানীয় বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, ৫০৬০ বছর ধরে সেতুটি নিয়ে আমরা অনেক কষ্টে আছি। ব্রিটিশ আমল থেকে সেতুটি অবহেলিত। যখন যে এমপি নির্বাচিত হয় তিনি পরিদর্শন করে সেতু করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেও পরে আর খবর রাখেন না। আবুল কালাম নামে আরেকজন বলেন, কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়র পরিদর্শন করে গেছেন। এর আগে আরো কয়েকবার দেখে গেছেন। প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু দেখতে আসে। কোনো কাজ হয় না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলার সহকারী উপপ্রকৌশলী মো. ফারুক হোসেন বলেন, সেতুর নকশা তৈরি হয়ে গেছে। উচ্চতা বাড়বে, তাই জায়গারও প্রয়োজন। জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলে নকশা তৈরির পরপরই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচমেক হাসপাতালে পাঁচ দালাল গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধবিক্ষোভের মধ্যে আশুলিয়া-সাভারে ১৩০ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ ঘোষণা