একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে পিতামাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা

অভিমত

সালসাবিল করিম চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত আগ্রহ, দক্ষতা, এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যের সাথে সঠিকভাবে সামঞ্জস্য রেখে ক্যারিয়ার নির্বাচন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে পিতামাতা ও শিক্ষকদের সমন্বিত ভূমিকা অপরিহার্য।

এক্ষেত্রে পিতামাতার উচিত শিশু বয়স থেকেই তাদের সন্তানের আগ্রহ, প্রতিভা ও দক্ষতা চিহ্নিত করা। পিতামাতার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ সন্তানের চরিত্র, কল্পনা শক্তি ও মেধা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পারে, যা তাকে ভবিষ্যতে তার ক্যারিয়ার নির্ধারণে সহায়তা করে।

শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নির্বাচন করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। এসময় পিতামাতার উৎসাহ প্রদান, মানসিক সমর্থন ও সহযোগিতা শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে, এমতাবস্থায় সন্তান মনে করে জীবনের যেকোনো সিদ্ধান্তে পিতামাতা তার একমাত্র বন্ধু এবং পরামর্শক।

অনেক সময় আমাদের সন্তানেরা অজানা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুকে পছন্দ করে বসে কিংবা তারা হালের স্রোতে গা ভাসিয়ে অন্যের ক্যারিয়ার অনুসরণ করতে চায়, যা তাদের বয়স, পরিবেশ কিংবা সামাজিক অবস্থানের সাথে খাপ খায় না।

এসময় পিতামাতার উচিত পারিবারিক শিক্ষা, মূল্যবোধ, রুচি এবং সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন উদাহরণ সন্তানের সামনে উপস্থাপন করে যৌক্তিক ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করা এবং সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

এছাড়াও পিতামাতার দায়িত্বের ভেতর আর্থিক সহায়তা করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় পছন্দের ক্যারিয়ার নির্ধারণে প্রশিক্ষণ বা বিভিন্ন কোর্সে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন হয়। পিতামাতার এই আর্থিক সহায়তা ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শিক্ষার্থীদের সফলতার পথে উৎসাহিত করে। এবার আসি শিক্ষকের ভূমিকা প্রসঙ্গে। শিক্ষকদের শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা ও পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্যারিয়ার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা প্রদান করতে সহায়তা করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তাদের আগ্রহ ও দক্ষতার দিক চিহ্নিত করতে সহায়তা করতে পারেন। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি এবং কোন দিকে তার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে তা শিক্ষকরা সহজেই বুঝতে পারেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।

এরপর শিক্ষকরা ক্যারিয়ার গঠনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পেশাগত প্রশিক্ষণের গুরুত্বও বোঝাতে পারেন। তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের কর্পোরেট জগৎ ও চাকরির বাজার সম্পর্কে বিশদ ধারণা প্রদান করে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ক্যারিয়ার চয়েসকে আরও সুদৃঢ় করে। শিক্ষকেরা ক্লাসরুমের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে সহায়তা করেন। তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যা ভবিষ্যতে তাদের ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করে।

সুতরাং এক কথায় বলা যায়, পিতামাতা ও শিক্ষকের সমন্বিত ভূমিকা শিক্ষার্থীদের জন্য সুসংহত ও সুপরিকল্পিত ভবিষ্যৎ গঠনে অত্যন্ত সহায়ক। তাদের পরামর্শ, সহযোগিতা এবং দিকনির্দেশনা শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে ক্যারিয়ার নির্বাচন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে সহায়তা করে।

লেখক : শিক্ষক

পূর্ববর্তী নিবন্ধকথার জাদু
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় আলো ছড়াচ্ছে ‘শহিদ ছবুর’ শিশুতোষ পাঠাগার