পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাবাসনের জন্য একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরতে পারেনি। মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থা তৈরির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পথ সুগম হবে।গতকাল রোববার জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এদিন রাষ্ট্রীয় অতিথি পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। খবর বাংলানিউজের।
বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী টম অ্যান্ড্রুজকে তার গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগের জন্য অভিনন্দন জানান। তার পদের সাফল্য আশা করেন। এ সময় বাংলাদেশের অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বিপুল সংখ্যক জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের অস্থায়ী আশ্রয় দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ মানবিকতা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
তিনি জানান, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য উভয় দেশ ২০১৭ সালে প্রস্থানের পরপরই তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যেখানে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিরাপদে দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সম্মত হয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রত্যাবাসনের জন্য একাধিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও একজনও রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরতে পারেনি।
তিনি বলেন, রাখাইনে আসিয়ান ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক ও অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ। গতকাল রোববার সফরশেষে ঢাকা ছাড়ার আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সঙ্কটের কারণ ও সমাধান বাংলাদেশে নয়, এসব মিয়ানমারের কাছেই। আমি মনে করি, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সেনাবাহিনীর অর্থের উৎস চিহ্নিত করার মাধ্যমে তা সমন্বিতভাবে বন্ধ করে দিতে পারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে, আমি জানি পরবর্তী প্রশ্ন সম্ভবত আসবে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ভূমিকা নিয়ে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, যেসব দেশ কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, রাজস্ব আয়ের পথ এবং অর্থায়ন বন্ধ করতে চায়, তারা মিলে এ কাজ করতে পারবে না।
অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মিয়ানমারে অস্ত্র যাওয়া বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে, চলুন তাই করি। নিরাপত্তা পরিষদে যদি এটাও সম্ভব না হয়, তাহলে যেসব দেশ এই নিষেধাজ্ঞা চায়, তারা মিলেও সমন্বিতভাবে করতে পারে। এভাবে মিয়ানমারের উপর চাপ বজায় রাখা যায়।
ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনসহ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি কঙবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বসতিও পরিদর্শন করেন তিনি।
তিনি বলেন, এ সঙ্কটের আরও জোরালো, আরও সমন্বিত আন্তর্জাতিক সাড়াদানের লক্ষ্যে আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চটা করব। এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর উপর চাপ প্রয়োগ এবং এ সঙ্কটের জন্য সামরিক জান্তাকে জবাবদিহির আওতায় আনতে বাস্তবিক পদক্ষেপ।