একজন প্রধানমন্ত্রী কতটা নাচলে বাড়াবাড়ি হয়?

| মঙ্গলবার , ৩০ আগস্ট, ২০২২ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ

কয়েক সপ্তাহ আগে গ্রীষ্মের এক রাতে বন্ধু আর পরিচিতজনদের সঙ্গে এক পার্টিতে অংশ নেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন; ব্যক্তিগত ওই আয়োজনে অ্যালকোহল পানের পাশাপাশি নেচে-গেয়ে আনন্দে মাতেন ৩৬ বছর বয়সী এই রাষ্ট্রনেতা।
রাজধানী হেলসিঙ্কির কোথাও ওই পার্টিতে কেউ একজন ফোন বের করে ভিডিও করতে শুরু করেন। ক্যামেরার সামনেই বাদ্যের তালে তালে নাচের সঙ্গে হাসাহাসি আর আলিঙ্গন চলে।
বিবিসি লিখেছে, ফিনল্যান্ডের সমাজে ত্রিশোর্ধ্ব কোনো সাধারণ নারীর জন্য খুবই সাধারণ একটি রাতের চিত্র এটা। কিন্তু ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সানা মারিন কোনো সাধারণ নারী নন। খবর বিডিনিউজের।
পার্টির সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস হলে প্রথমে দেশের ভেতরে, তারপর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শোরগোল পড়ে যায়। রাজনৈতিক চাপে সানা মারিন বাধ্য হন ড্রাগ টেস্ট করাতে হয়, যদিও ফলাফল আসে ‘নেগেটিভ’। পরে অন্য এক অনুষ্ঠানের একটি ছবি ফাঁস হয়, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন কেসারন্তায় দুজন সেলিব্রেটিকে প্রায় উন্মুক্ত বক্ষে পরস্পরকে চুমু খেতে দেখা যায় সেখানে। সানা মারিনকে তখন ক্ষমা চেয়ে বলতে হয়, বিষয়টি ‘ঠিক হয়নি’।
হেলসিঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইয়োহানা ভুরেলমা এক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডের রাজনৈতিক কেতা-কানুনের দিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে টপলেস ছবি অনেক ফিনিশীয়দের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। অনেকের কাছে ওই ভবন গণতন্ত্রের একটি পবিত্র স্থান, সুতরাং ওই সম্মানের জয়গাটা বজায় রাখতে হবে।
অনেকে আবার বলছেন, সানা মারিনকে ঘিরে এই বিতর্কের মূলে রয়েছে লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি। এরকম আরো অনেকের বিরুদ্ধে ‘তার জন্য মানানসই নয়’ এমন পার্টিতে অংশ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আগেও। ফিনল্যান্ডের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নারীরা নিজেদের নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন সানা মারিনের সমর্থনে। তাদের ভাষ্য, একজন তরুণ ও আকর্ষণীয় নারী রাজনীতিবিদ ওইভাবে ফুর্তি করার সাহস দেখিয়েছেন, এটাই তার একমাত্র দোষ।
সানা মারিন নিজেও বলেছেন, (মহামারীর) এই অন্ধকার সময়ে একটু আলো, একটু আনন্দ, একটু মজা করা আমার দরকার ছিল।
তুর্কু ইউনিভার্সিটির জেন্ডার স্টাডিজের অধ্যাপক আনু কোইভুনেন বলেন, সানা মারিনের অবস্থানে থাকা একজন পুরুষও কেলেঙ্কারির মুখোমুখি হতেন, কিন্তু লিঙ্গ পরিচয়ের কারণে সানা মারিনের ক্ষেত্রে অভিযোগের ভাষা ‘ভিন্ন’।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সানা মারিন এবারই প্রথম পার্টিতে মাস্তি করে ঝামেলায় পড়েননি, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে কোভিড আক্রান্ত একজনের সংস্পর্শে আসার পর ক্লাবে গিয়ে পার্টি করার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘গ্যাসের দাম না কমলে ভয়াবহ শীতের কবলে পড়বে ইউরোপ’
পরবর্তী নিবন্ধশেষ মুহূর্তে স্থগিত হলো চাঁদে নাসার নতুন মিশন