একই সিরিয়ালে লাইটার জাহাজ চলাচল কাল থেকে

নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে চলবে কার্যক্রম ।। ভাড়ার ৬০ শতাংশ শুরুতে, বাকিটা পরিশোধ পণ্য খালাসের আগে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না পণ্যের এজেন্টরা

হাসান আকবর | রবিবার , ২১ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে আগামীকাল থেকে একই সিরিয়ালে জাহাজ চলাচলের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত এই কার্যক্রমে লাইটার জাহাজ মালিকদের সকলে এবং পণ্য পরিবহনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার পণ্যের এজেন্টরা যোগ দিচ্ছেন কিনা তা নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করা হয়েছে। গতকাল মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্টের মুখ্য কর্মকর্তার (পিও এমএমডি) স্বাক্ষরিত একটি সভার কার্যবিবরণী অনলাইনে দেয়া হয়েছে। এতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলা হলেও অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছেন না জাহাজ মালিক এবং পণ্যের এজেন্টরা। অবশ্য পিও এমএমডি বলেছেন, সকলকে একই সিরিয়ালে এসে জাহাজ পরিচালনা করতে হবে। যারা আসবেন না তাদের পস্তাতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর থেকে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১৮শ জাহাজ। এসব জাহাজের মাধ্যমে বছরে অন্তত ১০ কোটি টন পণ্য পরিবাহিত হয়। লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ কার্গো ভ্যাসেল ওনার্স এসোসিয়েশন (বিসিভোয়া), কোস্টাল শিপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এবং ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অব চিটাগাং (আইভোয়াক) নামের তিনটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি ডব্লিউটিসির তিন সংগঠনের মধ্যে আইভোয়াকের সাথে অপর দুটি সংগঠনের বিরোধ হয়। তারা ডব্লিউটিসি থেকে বের হয়ে আলাদা সেল গঠন করে জাহাজ বরাদ্দ এবং পণ্য পরিবহন শুরু করে। ডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে প্রায় সাড়ে ৬শ কোটি টাকা আত্মসাতের জন্য ডব্লিউটিসি ভেঙে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করে। অপরদিকে আইভোয়াকের পক্ষ থেকে ডব্লিউটিসির বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মাঝে বিষয়টি নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত গড়ায়। ঢাকায় অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক থেকে চট্টগ্রামের নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল অফিসারকে প্রধান করে তিন সংগঠনের ছয়জন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিকে জাহাজ পরিচালনার ব্যাপারটি ঠিক করে একই সিরিয়ালে লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। উক্ত কমিটি ১৬ জানুয়ারি নৌ বাণিজ্য দপ্তরে বৈঠক করে এবং গতকাল ওই সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ হয়।

এতে আগামীকাল ২২ জানুয়ারি থেকে সকল লাইটার জাহাজ নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে একই সিরিয়ালে চালানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্তের উল্লেখ করা হয়। কীভাবে এই সিরিয়াল প্রথা পরিচালিত হবে তার একটি গাইডলাইন দেয়া হয়। এতে বলা হয়, সর্বসম্মতভাবে ৮টি সিদ্ধান্ত এবং ১২টি উপসিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিদিন বিকাল ৩টায় নৌ বাণিজ্য দপ্তরে বার্থিং মিটিং করার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো থেকে একজন করে সদস্য নিয়ে নৌযান সিরিয়াল প্রদানের ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটিকে সাহায্য করার জন্য বিসিভোয়া, কোয়াব, আইভোয়াক এবং কার্গো এজেন্ট একজন করে অফিস সহায়ক নিযুক্ত করবে।

এতে বলা হয়, জাহাজের লোড সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে ভাড়ার ৬০ শতাংশ এবং পণ্য খালাস সম্পন্ন হওয়ার আগে বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া উক্ত অর্থ পরিশোধ না হলে অভিযুক্ত কার্গোর এজেন্টকে পরবর্তীতে জাহাজ প্রদান করা হবে না।

সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গতকাল প্রচার হওয়ার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ডব্লিউটিসির তালিকাভুক্ত পণ্যের এজেন্টদের অনেকে বলেন, এভাবে কাজ করা সম্ভব হবে না। এতে পণ্যের এজেন্টরা ব্যবসা হারাবেন। তাদের কোনো কাজ থাকবে না। তারা প্রশ্ন তোলেন, আমদানিকারক যদি সমুদয় অর্থ নগদে পরিশোধ করবেন, তাহলে আর পণ্যের এজেন্টদের কাজ কি? আমদানিকারকই বাজার থেকে জাহাজ ভাড়া করে পণ্য পরিবহন করাবেন। এতে পুরো সেক্টরে আগের চেয়ে বেশি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে বলে একাধিক পণ্যের এজেন্ট মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, এখন আমরা যেভাবে কাজ করি তাতে বহু টাকা বকেয়া থাকে। এত নগদ টাকা নিয়ে ব্যবসা করা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

এ ব্যাপারে ডব্লিউটিসির কনভেনর মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, সবই ঠিক আছে। আমরা আগামীকাল থেকে নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে একই সিরিয়ালে জাহাজ পরিচালনা করব।

আইভোয়াকের মুখপত্র পারভেজ আহমেদ বলেন, একটি সার্কুলার আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তবে অফিসিয়ালি কিছু পাইনি। অফিসিয়ালি সার্কুলার পাওয়ার পর আমরা পিও এমএমডি সাহেবের সাথে মিটিং করব। এরপর আমাদের সাধারণ সদস্যদের সাথে মিটিং করব। তারপর সিরিয়াল দেয়ার ব্যাপারে আমাদের সদস্যদের সিদ্ধান্ত জানাতে পারব।

এ ব্যাপারে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, পণ্য লোড করার সাথে সাথে ৬০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৪০ শতাংশ অর্থ যদি জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারক নিজেদের মতো করে ঠিক করেন তাতে হয়তো আমরা কিছুটা ছাড় দেব। আমরা একটি গাইডলাইন তৈরি করেছি। এটি অনুসরণ করতে হবে।

তিনি বলেন, যারা এই সিরিয়ালে আসবে না তাদের পস্তাতে হবে। আগামীকাল থেকে একই সিরিয়ালে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুটে পণ্য পরিবহনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগরুর ঘাস কাটতে বাধা দেয়ায় হামলা চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধগ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সতর্কতা