একই রেখায় ৬ গ্রহ, চট্টগ্রামে পর্যবেক্ষণ

ছিল নাটক ও প্রশ্নোত্তর পর্ব

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

আকাশে একই রেখায় ছয়টি গ্রহ দেখা গেছে। এ ঘটনা বিরল। গ্রহগুলো হচ্ছে শনি, শুক্র, ইউরেনাস, নেপচুন, বৃহস্পতি ও মঙ্গল। বিরল এ দৃশ্য আবার দেখা যেতে পারে ২০৪০ সালে। গত শনিবার চট্টগ্রাম থেকে এ ৬টি গ্রহ টেলিস্কোপে পর্যবেক্ষণ করেছে শত শত মানুষ। স্কাই ওয়াচার্স ক্লাবের আয়োজনে এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের সহযোগিতায় আগ্রহীদের এটি দেখার ব্যবস্থা করা হয়। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরের এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে গ্রহ পর্যবেক্ষণ করা হয়।

এ সময় মহাকাশের ওপর নির্মিত নাটক ‘গ্যালিলিও গ্যালিলি’ প্রদর্শিত হয়েছে। এছাড়া এ নিয়ে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আকাশ বিষয়ক নানা প্রশ্নের জবাব দেয় উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মাত্র এক রাতের জন্য আকাশে এই ছয়টি গ্রহের সঙ্গে বুধকেও দেখা যাবে। সাধারণত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাতের আকাশ পরিষ্কার থাকলে বুধ ছাড়া সবকটি গ্রহ পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। একে গ্রহের কুচকাওয়াজও (প্ল্যানেটারি প্যারেড) বলা হয়। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রায় পুরোটা সময় তাদের দেখা মিলবে। এ নিয়ে ঢাকায়ও একইদিন ‘প্লানেট প্যারেড’ নামে গ্রহ দেখার আয়োজন করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকায় আরও আয়োজন রয়েছে বলে জানা গেছে। স্কাই ওয়াচার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গৌতম পাল আজাদীকে বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকে পর্যবেক্ষণ শুরু হয়। এতে প্রায় ৫০০ মতো আগ্রহী টেলিস্কোপে গ্রহ পর্যবেক্ষণ করেন। এর মধ্যে স্কুলকলেজের শিক্ষার্থী ছাড়াও সাধারণ জনগণ অংশ নেন। তারা পরবর্তীতে নানা প্রশ্ন করেন, সেগুলোর উত্তর দেন উপস্থিত আগত বিশেষজ্ঞরা। তিনি জানান, পৃথিবীসহ সৌরজগতের আটটি মূল গ্রহ একই কক্ষপথে থেকে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। তবে তাদের প্রদক্ষিণ করার গতি ভিন্ন হয়। সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ ৮৮ দিনে একবার প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ গ্রহটিতে ৮৮ দিনে ১ বছর হয়। আবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন। আর নেপচুনের সময় লাগে ৬০ হাজার ১৯০ দিন। অর্থাৎ নেপচুন গ্রহের এক বছরের মানে হলো পৃথিবীর প্রায় ১৬৫ বছর। গ্রহগুলোর গতি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় কখনো কখনো কিছু গ্রহ সূর্যের একই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। গ্রহগুলো যদি সূর্যের ডান দিকে থেকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তখন সেগুলো পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয়। অর্থাৎ আমরা রাতের আকাশে একসঙ্গে কয়েকটি গ্রহকে দেখতে পাই। তবে মাঝেমধ্যে বিরল ঘটনা ঘটে। এই সময় সব কটি গ্রহ এমনভাবে একই রেখায় অবস্থান করে যে, এগুলোকে একসঙ্গে পৃথিবী থেকে দেখা যায়। তিনি আরো জানান, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি এই চার গ্রহ পৃথিবী থেকে খালি চোখে দৃশ্যমান হওয়ার মতো যথেষ্ট উজ্জ্বল। তবে ইউরেনাস ও নেপচুন দেখতে হলে বাইনোকুলার বা টেলিস্কোপের প্রয়োজন হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিজের চোখে গ্রহগুলো দেখার মধ্যে একটা বিশেষত্ব আছে। গুগলে খোঁজ করেও এসব গ্রহের চমৎকার ছবি দেখা যাবে। তবে এই বস্তুগুলোর দিকে সরাসরি তাকানো মানে এমন কিছু আলোককণার দিকে তাকানো, যা মহাকাশের মধ্য দিয়ে লাখ লাখ বা কোটি কোটি মাইল পেরিয়ে চোখের রেটিনার ওপর এসে পড়ছে। দেখতে চমকপ্রদ হলেও এ ধরনের বিরল ঘটনায় পৃথিবীর ওপর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন। কেউ বলছেন এতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। আবার কেউ বলছেন এতে ক্ষেত্র বিশেষে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ১১ দাবিতে আবারো কন্টেনার পরিবহন বন্ধের হুমকি প্রাইমমুভার মালিক-শ্রমিকদের
পরবর্তী নিবন্ধপ্রবাসীকে মারধরের অভিযোগে মামলা