অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডের বৈধতা, মেয়াদের বিষয়ে অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মুখ খুলেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা হচ্ছে গণঅভ্যুত্থান।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে বর্তমান শ্রম পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক সমন্বয় সভা শেষে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ এর খসড়ার এই খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। অধ্যাদেশের খসড়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ নির্দিষ্ট না করে বলা হয়েছে, ত্রয়োদশ সংসদ প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না করার পর্যন্ত তারা ক্ষমতায় থাকবে। খবর বিডিনিউজের।
এই সরকারের কোনো কার্যক্রমের বৈধতা সম্পর্কে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টসহ অন্য কোনো আদালত বা কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই কোনো প্রশ্ন উত্থাপন বা তা অবৈধ বা বাতিল করতে পারবে না, এমন কথাও বলা হয়েছে এতে। বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন বা মামলাও করা যাবে না। নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ, জরুরি অবস্থা ঘোষণায় প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়াসহ সার্বিক বিষয়কে আইনি ভিত্তি নিয়ে এই অধ্যাদেশের খসড়া করা হয়েছে। অধ্যাদেশটি এখন গেজেট আকারে প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।
সরকারকে বৈধতা দিতে অধ্যাদেশ হচ্ছে, একইসঙ্গে সংস্কার কাজ কতদূর এগোলো–জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, এই সরকারের বৈধতা হলো গণঅভ্যুত্থান। যেটা সিদ্ধান্ত হয়েছে সেটা হচ্ছে লিগ্যাল রেটিফিকেশন এবং অন্যান্য বিষয়। গত তিন মাস আমাদের কার্যক্রমের অগ্রগতি আপনারা দেখেছেন। সংস্কার কমিশনগুলোর সঙ্গে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা নিয়মিত বসছেন। রিপোর্টের ভিত্তিতে সংস্কার কার্যক্রম চলবে। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপ করার জন্যই সংস্কার কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার ভিত্তিতে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার রূপরেখা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা আশা করি একটি নতুন বাংলাদেশ যেটার কথা আমরা মুখে বলছি, সেটার বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে আর গঠনের আগে ১০৬–এ (সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ) এ সরকারের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। যে অর্ডিন্যান্সের কথা বলা হচ্ছে, সেটার মাধ্যমে আরও লিগ্যাল রেটিফিকেশন হবে।
চলমান শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে কিছু বেতন বকেয়ার পাশাপাশি পরাজিত আওয়ামী লীগের উস্কানি রয়েছে বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে শ্রমিকদের উস্কে দেওয়ার মতো কিছু পোস্ট আমার চোখে পড়েছে। ষড়যন্ত্র তো ঘোষণা দিয়ে হচ্ছে ভাই। সেটা তো সোশ্যাল মিডিয়ার সবাই দেখছে। তারা শ্রমিকদের ঢাকায় আসতে বলেছে। কিন্তু (আওয়ামী লীগের) এই কথায় বিশেষ বড় অংশের কেউ কনভিন্স না। না হলে আওয়ামী লীগের আহ্বানে শ্রমিকরা আজকে মিছিল নিয়ে আসত ঢাকার দিকে, কেউ তো আসেনি।
শ্রমিক বিক্ষোভ চলতে থাকা গাজীপুরের টিএনজেড অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বকেয়া নিয়ে কয়েক দফায় মিটিং ও প্রতিশ্রুতি আদায়ের পরও তারা শ্রমিকদের বেতন দেয়নি বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গত ৭ নভেম্বর উনি (মালিক) বকেয়া দেবেন বলেছেন। ১৩তম বার কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেতন দিলেন না। এটা একটা মানবিক বিষয়।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, শ্রমিকরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করলে আগের সরকারের মতো আমরা তাদের তাড়িয়ে দিতে পারি না। তবে কারও উস্কানিতে শ্রমিকরা জনভোগান্তি সৃষ্টি করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। এরকম ট্রানজিশন সময়ে একটু সমস্যা হয়। আমরা পোশাক খাত নিয়ে ১৫টা মিটিং করেছি। ৯৯ ভাগ সমস্যার সমাধান হয়েছে।
শ্রম সচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ২৪০০ কারখানার মধ্যে ১৯টা কারখানা বেতন দিতে পারছে না। সরকার টাকা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে। পেছনে কেউ ইন্ধন দিলে সফল হচ্ছে না। তৃতীয় পক্ষ কেউ ইন্ধন দিলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।