দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাংলাদেশের জনগণ মানে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদকে ‘অবৈধ’ দাবি করে তা বাতিলেরও দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে হবে এবং সেই নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। এই দাবিতে আন্দোলন চলছে, চলবে এবং বিজয়ী হব।
গতকাল শনিবার বিকালে নগরের কাজীর দেউড়ি নুর আহমদ সড়কে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল–পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব বন্দির মুক্তি ও অবৈধ সংসদ বাতিলের এক দফা দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি যৌথভাবে কেন্দ্র ঘোষিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে। নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন ও সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া।
সমাবেশ শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেঁধে, হাতে কালো পতাকা নিয়ে নাসিমন ভবন দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু করে লাভলেইন, এনায়েত বাজার, জুবিলী রোড হয়ে তিন পুলের মাথায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে মিছিল শেষ করে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, যে নির্বাচন হয়েছে, সেটাকে কেউ বলে আমরা আর মামুরা, কেউ বলে আমি আর ডামি, আর কেউ বলে আমি–ডামি আর স্বামীর নির্বাচন। স্বামী বলে কেন বলে জানেন তো? আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছিল, প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে নাকি আমাদের স্বামী–স্ত্রীর সম্পর্ক। আর পত্রিকায় দেখেননি, মেহেরপুরের একজন প্রার্থী বলেছে, আমি ভারতের ক্যান্ডিডেট।
মেহেরপুর ১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের মোবাইলে কথা বলার একটা অডিও ফাঁস হয়। যেখানে তিনি বলেছেন, আমি ভারতের প্রার্থী। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ৮ জানুয়ারি মামলা করে নির্বাচন কমিশন। তার প্রসঙ্গ টেনে নজরুল বলেন, তার কোনো সাজা হয়েছে? গ্রেপ্তার করেছে? কেন করেনি? আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, কোন সাহসে একজন প্রার্থী, যে আবার আওয়ামী লীগের নেতা, বলার সাহস পায়, আমি ভারতের প্রার্থী। সেজন্য বলে আমি, ডামি ও স্বামীর নির্বাচন।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বলা হতো বিনা ভোটের সরকার। কারণ ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টিতে কোনো প্রার্থী ছিল না। ২০১৮ সালে হলো নিশি রাতের সরকার। কারণ রাত্রিবেলা ব্যালট বাঙ ভর্তি করেছে। আর এবার এই সরকারকে সারা দুনিয়া বলছে, এটা ডামি সরকার। ডামি সরকার কি আসল সরকার হয়? এই সরকার টিকতে পারে না। এই সরকারের টিকে থাকা উচিত নয়। কারণ এই সরকারকে জনগণ ভোট দেয়নি।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) পাঁচটার পরে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ভোট পড়েছে ২৮ শতাংশ। পাশে থেকে একজন বলে দেন, না স্যার ৪০ শতাংশ। তখন ঢাকার একটি রেডিওর প্রতিনিধিরা জিজ্ঞেস করলেন, আপনি একবার বললেন ২৮, আবার বললেন ৪০। ব্যাপারটা কী? তখন তিনি (সিইসি) বলেন, আমি তো ২টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, বুঝতে পারি নাই, পরে সহকর্মীরা মনে করিয়ে দিয়েছে। ভাবেন একবার, দেশে একটা জাতীয় নির্বাচন হচ্ছে আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক, ফলাফল তো ঠিক করাই আছে, কত কেন্দ্রে কে কত ভোট পাবে। কারণ বিরোধী দল নির্বাচন করে নাই, নির্বাচন কমিশনার আরামে ঘুমাইতে পারে। কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু স্বীকার করেছে, সেটার জন্য ধন্যবাদ জানাই।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, এই তথাকথিত নির্বাচনী খেলার আগে অল্প কিছুদিনের মধ্যে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত ১৫শর বেশি নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্যায়ভাবে তাদেরকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, এটা নাকি কাকতালীয়। উনারা ইচ্ছে করে করেন নাই। এতদিন হয় না সাজা, ঠিক নির্বাচনের আগে দিয়ে রাতে পর্যন্ত আদালত খোলা রেখে শত শত নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এটাকে কী কাকতালীয় মনে হয় আপনাদের? এটি আমাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য করা হয়েছে। কিন্ত আমরা ভয় পাইনি। ওটা তো ছোট জেল। এই সরকার গোটা বাংলাদেশকে কারাগার বানিয়ে রেখেছে। তাই বড় কারাগার থেকে ছোট কারাগারে যাওয়া নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো কর্মী ভয় পায় না। তাই ভয় দেখিয়ে লাভ নেই।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। প্রহসনের ডামি নির্বাচন করেছে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ এই ভোট বর্জন করেছে। এই নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষ মানে না। তাই বর্তমান অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যায়নি, শিশুরা ভোট দিয়েছে। আওয়ামী লীগের এই নির্বাচন ৯৫ ভাগ মানুষ বয়কট করেছে। এই নির্বাচনে সন্ত্রাসীরা ৬০ সেকেন্ডে ৬০টি ভোট দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড করেছে। তাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নির্বাচনে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা বাইরের দেশের এজেন্ট হয়ে রাতের অন্ধকারে জিমনেসিয়াম ও থানায় বসে ব্যালট বাঙ ভর্তি করেছে। ভোট ডাকাতি করে গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। এর জবাব দিতে হবে। আন্দোলন চলবে, হয়তো একটু সময় লাগছে। কিন্তু বিদায় নিতে হবেই।
আবু সুফিয়ান বলেন, পাঁচ ভাগ মানুষের ভোট নিয়ে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আওয়ামী লীগের এই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে অচিরেই বিদায় নিতে হবে। মানুষের সম্পদ চুরি করে বাইরে নেওয়ার হিসাব আগামী দিনে অবশ্যই দিতে হবে।
জালাল উদ্দীন মজুমদার বলেন, আওয়ামী লীগ সিন্ডিকেট করে সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতারণার ডামি নির্বাচনের পরেই সরকার নতুন কারসাজি করে শেয়ার বাজারে ধস নামিয়েছে।
নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াছিন চৌধুরী লিটনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, বিএনপি নেতা মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান প্রমুখ।