এই মধ্য নভেম্বরেও কেন কমছে না ডেঙ্গু

ডেন-২ ভ্যারিয়েন্ট দায়ী, বলছেন চিকিৎসকরা চট্টগ্রামে আরো এক নারীর মৃত্যু, শনাক্ত ৪৩

জাহেদুল কবির | বুধবার , ১৩ নভেম্বর, ২০২৪ at ৪:৩৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীতে এখন বৃষ্টি নেই বললেই চলে। ভোরের দিকে ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। কিন্তু এই মধ্য নভেম্বরে এসেও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্তের পাশাপাশি বাড়ছে মৃত্যুর হার। সাম্প্রতিক বছরগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুর আক্রান্তের হার ঊর্ধ্বমুখী থাকে। নভেম্বরের দিকে সেটি কমে আসে। কারণ নভেম্বরে বৃষ্টিপাত খুব একটা হয় না। ফলে বৃষ্টির পানি জমে থাকার সম্ভাবনাও থাকে না। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৮ জন। এর মধ্যে নগরীতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ২২৮ জন এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২২০ জন। এছাড়া মোট মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। এর মধ্যে ১৮ জনই নারী। চলতি নভেম্বরে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৫১৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। নভেম্বরে এসে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়ার জন্য ভারতমিয়ানমারের ডেঙ্গুর ডেন২ ভ্যারিয়েন্টকে দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে যারা ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন তাদের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হচ্ছে। এছাড়া দেরিতে হাসপাতালে আসাও মৃত্যুর অন্যতম কারণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে গত সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনতাহেরা নামে ৬০ বছর এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। কক্সবাজারের পেকুয়ার বাসিন্দা আনতাহেরা ডেঙ্গু পরবর্তী কার্ডিওজনিক শক ও ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১৫ জন, ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫ জন, চট্টগ্রাম সিএমএইচ হাসপাতালে ৪ জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে ৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ১২ জন। চলতি বছর মোট আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৮৫৮ জন পুরুষ, ৯৫৬ জন নারী এবং ৬৩৪ জন শিশু রয়েছে। এছাড়া মোট মৃত্যুর হিসেবে নারী ১৮ জন, পুরুষ ১১ জন এবং ৪ জন শিশু রয়েছে। অপরদিকে গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৩৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ২১১ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বর হলে অবহেলা করা যাবে না। দেরিতে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়া এবং রোগীকে দেরিতে হাসপাতালে আনার কারণে অনেক রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যে ডেঙ্গুর (এনএসওয়ান) পরীক্ষা করাতে হবে। এরপর ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থেকে তরল জাতীয় খাবার (জুস, ডাবের পানি, স্যালাইন, স্যুপ) বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। জ্বরের জন্য শুধু সাধারণ প্যারাসিটামল খাবে। কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে জ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময়টাতে অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র‌্যাশ, প্রস্রাবপায়খানায় বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তবে অনেকে রক্তের কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (সিবিসি) পরীক্ষায় প্লাটিলেট কমে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। প্লাটিলেট কমলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। প্লাটিলেট কমলে রক্তক্ষরণ হবে এটি ঠিক নয়। এছাড়া ডেঙ্গুর চিকিৎসায় প্লাটিলেট কমে গেলে তাকে প্লাটিলেট দিতে হবে, এটিও গাইডলাইনে নেই। চিকিৎসাটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে রোগীর শারীরিক অবস্থার ওপর। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে প্লাটিলেট ১০ হাজারের নিচে নামলেও রক্তক্ষরণ হয় না। আবার অনেকের প্লাটিলেট কাউন্ট বেশি থাকলেও রক্তক্ষরণ হয়।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম আজাদীকে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার গত বছরের তুলনায় কম রয়েছে। তবে বর্তমানে অনেক রোগী ডেন২ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছেএমন একটি গবেষণা সম্প্রতি চমেক হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক করেছিলেন। এই ভ্যারিয়েন্টটি ভারত ও মিয়ানমার থেকে এসেছে বলা হয়েছে। তবে আমরা যেটি দেখছি, মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে দেরি করে হাসপাতালে আসা। এছাড়া যাদের ক্রনিক রোগ রয়েছে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। ডেঙ্গুর বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে সব সময় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছি। আমরা সব সময় সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছি।

উল্লেখ্য, গত বছর নগর ও বিভিন্ন উপজেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সরকারিবেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ভর্তি হয়েছিলেন ১৪ হাজার ৮৭ জন। এর মধ্যে মারা যান ১০৭ জন। ২০২২ সালে মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৪৪৫ জনের মধ্যে মারা যান ৪১ জন। ২০২১ সালে আক্রান্ত হন ২৭১ জন এবং মারা যান ৫ জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধজনগণকে ছাড়া কোনো সংস্কার গ্রহণযোগ্য হবে না : খসরু