সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করতে গিয়ে ওয়াসা আইন মানছে না দাবি করেছেন। তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। মেয়র বলেন, হালিশহর এলাকায় সড়কের এই বেহাল অবস্থা কেন? কারণ ওয়াসা কোনো রুলস মানছে না। তারা তাদের মতো করে ঘেরাও দিয়ে সড়ক কাটছে। এতে সড়ক ভাঙছে। ঠিকমতো মেরামত করছে না। তারা হালিশহরকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। এখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না। তাদের কারণে সিটি কর্পোরেশনের বদনাম হচ্ছে।
আবার বর্ষার এই তিন মাস ওয়াসা যাতে সড়ক কাটাকুটি না করে, তার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন। বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের সংস্কারকাজ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ভারী বর্ষণের কারণে যেসব রাস্তা খানাখন্দ হয়ে গেছে, তা সংস্কার করা হবে। আগামী তিন মাস যাতে সড়ক না কাটে, সে জন্য ওয়াসাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ডা. শাহাদত বলেন, জলাবদ্ধতা বিষয়ে সমস্ত সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আমরা একসাথে বসেছি। আমরা কাজ করছি সমন্বিতভাবে। আমরা একটা কন্টিনিউয়াস মনিটরিং এর মধ্যে আছি। রাস্তা যেগুলো ভারি বর্ষণের কারণে খানা–খন্দ হয়ে গেছে সেগুলো আমরা রিপেয়ার চালিয়ে যাব। এখানে জোয়ারের পানির একটা ফ্যাক্টর আছে। সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আমরা বলেছি তারা যাতে সুইস গেটগুলো সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আর পাম্পিং হাউজের ব্যবস্থা করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চট্টগ্রামে বছরজুড়ে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়িতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। পানি সরবরাহে পাইপলাইন বসাতে বছরব্যাপী নগরজুড়ে এ যজ্ঞ চালাচ্ছে সেবা সংস্থাটি। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক বা নগরের অলিগলি কোনোটিই বাদ যায়নি এ থেকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন নগরবাসী। বর্ষায় খানাখন্দের কষ্ট পোহাতে হচ্ছে, ভোগ করতে হচ্ছে অসহনীয় যন্ত্রণা। পড়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশ আইন ১৯৯৫ ও বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, কোনো প্রকল্প গ্রহণের আগে অবস্থানগত ও বাস্তবায়নের আগে পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে কাজ করার কথা। সড়কের ক্ষেত্রে চলাচলের বিকল্প রাস্তাও খোলা রাখার কথা। শুষ্ক মৌসুমে হলে তেমন অসুবিধা থাকার কথা নয়, তখন শুধু ধুলাবালির সমস্যা থাকে। এখন বর্ষায় জলে–কাদায় নাস্তানাবুদ নগর–জীবন। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম ওয়াসা বা তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়বদ্ধতার পরিচয় দিতে হবে। সিটি মেয়রের আহ্বানের পরও এখনো কাজ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। ফলে উন্নয়ন কাঙ্ক্ষিত হলেও দুর্ভোগ পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীর।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, সেবা সংস্থার অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজের কারণে নগরবাসীর দুর্ভোগ চরমে। বিকল্প সড়ক না রেখে একের পর এক সড়ক কেটে চলেছে ওয়াসা। ফলে কোনো কোনো সড়কে বন্ধ থাকছে যানবাহন চলাচল। আবার কোনোটির পাশে বড় গর্ত থাকায় প্রায় সময় যান চলাচলে ঘটছে দুর্ঘটনা। আবার সড়কে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ি কোথাও কোথাও মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।
বলা যায়, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও চট্টগ্রাম ওয়াসার সমন্বয় নেই। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, এই দুই সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতা আর গেল না। একই ইস্যুতে বছরের পর বছর ধরে দুই সংস্থার মধ্যে এ সমন্বয়হীনতা চলছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বলছে, নিয়মানুযায়ী কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট রাস্তাগুলো সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেবে–এটাই শর্ত। আর ওয়াসা বলছে, প্রকল্প কাজের জন্য কর্তন করা রাস্তা মেরামতের জন্য সিটি কর্পোরেশনকে টাকা দেয়া হয়। এমনকি কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই রাস্তাগুলো কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই যে যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ির মাধ্যমে যতটা না নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হয়, তার চেয়ে বেশি জনদুর্ভোগ, পরিবেশ বিপর্যয় এবং ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়ই বেশি। তাঁরা বলেন, সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার মাঝে নিয়ে আসতে হবে। শুধু বরাদ্দের টাকা খরচ করাই যেন উদ্দেশ্য না হয়, মানুষকে যেন দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, সে জন্য দেখভালকারী প্রতিষ্ঠানের শক্ত কাঠামো প্রয়োজন। আমরা অবশ্যই উন্নয়নের পক্ষে, তবে তা মানুষকে কষ্ট দিয়ে নয়, দুর্ভোগ বাড়িয়ে নয়। বরং যে উন্নয়নের উদ্দেশ্য মানুষের কল্যাণ, সেই উন্নয়ন যেন সঠিক কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে, একটি সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় সেদিকটি নিশ্চিত করতে হবে।