মীরসরাই উপজেলায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজের। উপযুক্ত আবহাওয়া ও বালি মিশ্রিত মাটি হওয়ায় উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩শ একর জমিতে চাষ হয়েছে তরমুজ। অধিকাংশ গাছে ফুল ফোটার পাশাপাশি তরমুজের মুকুল এসেছে। রবি মৌসুমে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকলেও চলতি বছর এখানে তরমুজ চাষ করে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে পূর্ব ইছাখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুডে সবুজ লতার সমারোহ। তরমুজ গাছে কোনোটিতে ফুল এসেছে কোনোটিতে আবার তরমুজের মুকুল এসেছে। এবার প্রথমবারের মতো পূর্ব ইছাখালী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হলো তরমুজের। জানা গেছে, প্রত্যেক বছর রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জায়গা খালি পড়ে থাকতো। পূর্ব ইছাখালী গ্রামে দোঁআশ মাটি (বালিযুক্ত) ও উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। তার উপর ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় চলতি বছর পার্শ্ববর্তী নোয়াখালীর জেলার সুবর্ণচর উপজেলার ৯ জন উদ্যোক্তা মীরসরাইয়ে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তারা মাটিগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করেন। মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত ডিসেম্বর মাসে তারা স্থানীয় কৃষকদের থেকে ৩ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকা খাজনায় বর্গা নেন। সেই জমিতে তারা তরমুজের বীজ বপন করেন। আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সুবর্র্ণচর উপজেলার মতো মীরসরাইয়েও অধিকাংশ তরমুজ গাছে ফুল ও মুকুল এসেছে। তরমুজ চাষী মো. মুজাক্কির বলেন, তারা ৯ জনের একটি দল নোয়াখালীর মাইজদী কৃষি অফিস থেকে তরমুজ চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর গত কয়েক বছর নিজ উপজেলা সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ করে সফল হন। মীরসরাই উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা এখানে বাণিজ্যিক ভাবে চাষের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের থেকে জমি বর্গা নিয়ে চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশি আট প্রজাতির তরমুজ চাষ করেন। সাড়ে ৩’শ একর জমিতে তাদের অধীনে প্রায় শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি আরো বলেন, মীরসরাইয়ের মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সঠিক পরিচর্যা করলে তরমুজ চাষ করে সফল হওয়া সম্ভব। তবে তরমুজ গাছ ছত্রাকসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। তাই সঠিক সময়ে কীটনাশক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। আগামী এক মাসের মধ্যে তরমুজ বিক্রির উপযোগী হবে বলে জানান তিনি। মীরসরাই উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সহায়তা না পাওয়ায় হত্যাশা ব্যক্ত করেন এই উদ্যোক্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মীরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করা হয়েছে।
আমি তরমুজ খেত পরিদর্শন করে এসেছি। খেতে জৈব সার ব্যবহার ও রোগ প্রতিরোধের জন্য চাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছি। আবহাওয়া উপযোগী থাকলে ভালো ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও অন্যান্য রবিশস্য থেকে এটাতে ৩ গুণ বেশি লাভ হয়। তিনি আরো বলেন, তরমুজ চাষীরা আগে থেকে যোগাযোগ করলে তাদের উপজেলা কৃষি অফিস থেকে উপকরণ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হতো। এখন কোনো বরাদ্ধ নেই। নতুন বরাদ্ধ আসলে তাদের সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্রত্যেক বছর খালি পড়ে থাকতো। এ বছর সুবর্ণচর এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা সেই জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। গাছের বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় তরমুজের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মীরসরাইয়ের বিভিন্ন গ্রামে তরমুজ চাষ করা সম্ভব বলে জানান তিনি।