এইসব দিনরাত

ছন্দা দাশ | বৃহস্পতিবার , ১৫ জুলাই, ২০২১ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

সময়টা কাটছে অলস, আনন্দহীন, মন্থর গতিতে। যার সাথেই কথা বলি সেই একই বিষয়। করোনা, লকডাউন, মৃত্যু, অভাব। বলতে পারিনা আমি অন্যকিছু চেয়েছিলাম, মনের ভার লাঘব করতে তোমার দ্বারে হাত পাতা। হয়না, হয়তো সেও আমার কাছে তাই প্রত্যাশা করেছিল। জানা হয়না পরস্পরকে অথচ দেখাদেখি হয় প্রতিদিন। এখন সময়েগুলো একই রূপ নিয়ে কাটছে। রোজ সকালে ঘুম ভাঙতেই ভাবি আজও ক্লান্তিকর বৈঠা বাওয়া। “থোর বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর”।
তারও মধ্যে আছে ধর্ষণ, চুরি, অনিয়ম, রাজনৈতিক হানাহানি। খারাপ সময়ের চূড়ান্ত ছবি। তবু্‌ও বন্ধু, আত্মীয়ের প্রশ্নের উত্তরে বলি ভালো আছি। ভালো কি আছি? সে প্রশ্ন অবান্তর। যিনি প্রশ্ন করছেন আর যিনি উত্তর দিচ্ছেন দুজনেই জানি ভালো নেই। কেউ ভালো নেই। পৃথিবীর কঠিন অসুখ। মানুষের মনেরও অসুখ তাই। তারপরও যারা ভালো আছেন তাদের জন্য আমরা সাধুবাদ। ভালো যে আছেন সে শুধু নিজের মধ্যে সীমা রাখলেও অনেকের মনের অসুখ অসীম। তিনি যে সবার চেয়ে ভালো আছেন এই দুঃসময়ে সেটা দশজনকে জানাতে না পারলে তাঁর আবার অন্য রকম অসুখ। তাই সক্কাল বেলায় কান ফাটানো শব্দে ভেসে আসে হিন্দি গানের চটুল সুর। আর প্রায় প্রতিদিনই পোলাও, মাংসের লোভনীয় গন্ধের করুণ আবহ। করুণ কেন? কারণ ঠিক তাঁর পাশের বাসাটির বসবাসকারীদের ঘরের অভাব বাড়ন্ত। আজকাল প্রায়শই আমার মনে হয় কিছু মানুষের জন্য করোনার এই প্রকোপ যথার্থ। কিন্তু পরমুহূর্তেই ভাবি এতে তো ভালো মানুষেরও দুর্গতি সীমাহীন। কিন্তু এও সত্যি একে করে পাপ সবে দুঃখ পায়।কাল বিকেলে হাঁটার সঙ্গীনী বললেন রোজ আমাদের ঝগড়া বাড়ছে। আগে এমন ছিলো না। কেন বলুন তো? বয়স বাড়ছে তাই? আমি কি বলবো? বয়স? ঘরবন্দী জীবন? একাকিত্ব? নাকি অপ্রাপ্তি? এও তো সত্যি একসময়ের পরিবার প্রধান তাঁর সাম্রাজ্য হারিয়ে আজ কৃপাপাত্র পরিবারের সদস্যদের কাছে। তাঁর আর নিষ্ফল রাগ দেখানোর মানুষ কোথায়? নিজের স্ত্রী ছাড়া? মনের এই দাম কে দেবে? অথচ স্ত্রীও মানুষ। তারও মন থাকে। তবুও তাকে থাকতে হয়,বাঁচতে হয় মনের দরজা বন্ধ করে। এর নাম কি জীবন?

পূর্ববর্তী নিবন্ধলকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর জীবন
পরবর্তী নিবন্ধকরোনাকে পরাস্ত করতে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে