ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে দেওয়া শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আবার ঢাকায় আসছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল–আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
আজ রোববার সফর শুরুর প্রথম দিন তারা বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে। এদিন দলের একটি অংশ সচিবালয়েও যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে গভর্নরর আহসান এইচ মনসুর, মুদ্রানীতি বিভাগের কর্মকর্তা ও ডেপুটি গভর্নররা অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজকে বলেন, ‘বৈঠকের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে বৈঠক হবে আইএমএফের সঙ্গে।’ এবারের মিশনেও নেতৃত্বে দিচ্ছেন আইএমএফের গবেষণা বিভাগের উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
১১ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের এই প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে। রোববারের সূচিতে সব মিলিয়ে ৭টি বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা আইএমএফের প্রতিনিধিদের। সকাল সোয়া ৯টায় সচিবালয়ে যাবে একটি দল। আরেকটি দল যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। খবর বিডিনিউজের।
দুই কিস্তি একসঙ্গে পেতে মুদ্রা বিনিময় হার বাজরের উপর ছেড়ে দেওয়া, চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়ানো ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড–এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার শর্ত রয়েছে।
সরকার রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার ঘোষণা দিয়েছে ঈদের ছুটিতে যাওয়ার আগে। অন্য দুটি শর্তের ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
ঋণ চুক্তির পরিকল্পনা অনুযায়ী চতুর্থ কিস্তিতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ আছে ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার। আইএমএফের কাছ থেকে এই ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য আর্থিক খাতে নানা সংস্কারের শর্ত পূরণ করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এর মধ্যে চতুর্থ কিস্তিতে অর্থ পেতে শর্ত ছিল চারটি।
সেগুলো হল অর্থনীতির বহির্চাপ সামাল দিতে রাজস্ব আদায় জোরদার করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন প্রশ্নে সবুজ প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতে নীতিমালার বাস্তবায়ন।
এর মধ্যে মুদ্রার বিনিময় হার ও রাজস্ব আহরণ নিয়ে শর্ত পূরণের অগ্রগতি নিয়ে আইএমএফ সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কথা ছিল, তৃতীয় পর্যালোচনা শেষ করে ৫ ফেব্রুয়ারি বোর্ড সভার পর ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ৬৪ দশমিক ৫ কোটি ডলার ছাড় করবে সংস্থাটি। তবে সেই সভা ১২ মার্চও হয়নি।
ফলে চতুর্থ কিস্তি অনুমোদনের বিষয়টিও বিলম্বিত হয়। বিদেশি মুদ্রার সরবরাহ সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়। কয়েক দফা আলোচনা শেষে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর সে বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ।
এরপর ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তিতে পায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। তৃতীয় কিস্তিতে গত বছর জুনে পেয়েছে ১১৫ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে প্রায় ২২১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে দেওয়া ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে তৃতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার ও শর্ত পরিপালনের অগ্রগতি দেখতে গত ৪ থেকে ১৮ ডিসেম্বর ঢাকা সফর করে আইএমএফ মিশন।
ওই সফর শেষে আইএমএফের প্রতিনিধি দল বলেছিল, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়ানো, আর্থিক খাতের সংস্কার ও অর্থনৈতিক চাপ সামাল দিতে আগের ঋণের বাইরে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার দিতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কর্মকর্তা পর্যায়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। এ ঋণ আইএমএফের পর্ষদে অনুমোদন পেলে আগের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু চতুর্থ কিস্তি ছাড় করেনি আইএমএফ।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা জেলা প্রশাসক সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে আগামী জুন মাসে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের পরেরর দুই কিস্তি (চতুর্থ ও পঞ্চম) ছাড় করবে আইএমএফ। তিনি বলেন, আমরা তাদের বলেছি এত শর্ত একসঙ্গে মানা যাবে না। তারাও সাজেস্ট করেছে আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি জুন মাসে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড় করার।