মাত্র ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার জমি বন্ধক রেখে ৮৪ কোটি টাকার কম্পোজিট ঋণ সুবিধা নেয় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোজাহের হোসেন। এবি ব্যাংক পোর্ট কানেক্টিং রোড শাখার ম্যানেজার নাজিম উদ্দিন এ ঋণের সুপারিশ করেন। পরবর্তীতে এলসি খোলে বিদেশ থেকে মটর আমদানি করেন মোজাহের। একই সময়ে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকেও গম কেনেন তিনি। ঋণের বিপরীতে দুই বিলের এলসির টাকা পরিশোধ করে এবি ব্যাংক। কিন্তু পরবর্তীতে এসব খাদ্যপণ্য বিক্রি করে ঋণের কোন টাকাই পরিশোধ করেননি মোজাহের হোসেন। সবমিলিয়ে ১৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২০১৯ সালের ২৬ ফ্রেব্রুয়ারি হালিশহর থানায় দুদকের দায়ের করা একটি মামলার অভিযোগপত্র দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক। গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম স্পেশাল জজ আদালতে এ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন আদালতে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ছানোয়ার আহমেদ লাভলু।
অভিযোগপত্রে মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারী মোজাহের হোসেন, এবি ব্যাংক পোর্ট কানেকটিং রোড শাখার ম্যানেজার মো. নাজিম উদ্দিন ও প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট এডমিনিস্ট্রেশন মনিটরিং বিভাগের ইনচার্জ মো. আজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগের সত্যতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। মামলাটিতে ১৩৩ কোটি ১৮ লক্ষ ৯২ হাজার ৬১৭ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ করা হয়।
সূত্রে জানা যায়, এবি ব্যাংকের গ্রাহক মোজাহের হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১২ সালে শাখা ম্যানেজারের সুপারিশে প্রধান কার্যালয় থেকে ৮৪ কোটি টাকা কম্পোজিট ঋণ সুবিধা অনুমোদন দেয়া হয়। তন্মধ্যে রিভলবিং এলসি ৮০ কোটি টাকা এবং রিভলবিং টাইম লোন ছিল ৪ কোটি টাকা। এরপর ২০১৩ সালের ৭ এপ্রিল মোজাহের হোসেনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৩ হাজার ৯৬৪ মেট্রিক টন মটর ডাল আমদানির জন্য এবি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় ৬২ লক্ষ ১৫ হাজার ১৪০ ডলার ৮০ সেন্ট মূল্যের এলসি খোলা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালের ১২ জুন সরবরাহকারীর ব্যাংক ডকুমেন্ট পেয়ে গ্রাহকের পণ্য গ্রহণের প্রত্যয়ন পেয়ে বিলটি পরিশোধ করা হয়। ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাদকতা ছিল। কিন্তু গ্রাহক মোজাহের হোসেন আমদানিকৃত মটর ডাল বিক্রি করে হিসাব সমন্বয় না করে ঋণের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেন বলে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হন।
একইভাবে গম কেনার জন্য ৩৪ কোটি ৯৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ২৯০ টাকার একটি আভ্যন্তরীণ এলসি খোলেন মোজাহের হোসেন। পরবর্তীতে বিল ডকুমেন্ট পেয়ে ৩১ কোটি ৪৯ লক্ষ ৯৬ হাজার ৬৬১ টাকার এলসির দায় পরিশোধ করা হয়। একই তারিখে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাদকতা থাকলেও গম বিক্রির পুরো টাকা সমন্বয় না করে ব্যাংক ঋণের পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হন। তদন্তকালে দুদক কর্মকর্তা নিশ্চিত হন মাত্র ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকার জমি সহায়ক জামানত রেখেই ব্যাংক ম্যানেজার মেসার্স ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের ঋণ সুবিধা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ব্যাংকের ক্রেডিট এডমিনিস্ট্রেশন মনিটরিং এর ইনচার্জ ঋণের বিষয়টি মনিটরিং না করায় বৈদেশিক এলসি ও লোকাল এলসির মাধ্যমে আমদানি ও ক্রয় করে খাদ্য সামগ্রী বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই গ্রাহক পুরো টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ পেয়েছেন। এ ঘটনায় অনুসন্ধান পরবর্তী দুদক প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি হালিশহর থানায় মামলা করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। ওই মামলায় গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন।