উড়িষ্যায় আজ আঘাত হানতে পারে ইয়াস

চট্টগ্রামে তেমন প্রভাব থাকবে না জোয়ারের পানি বাড়ার সম্ভাবনা বন্দরে ৩ নং সতর্ক সংকেত

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৬ মে, ২০২১ at ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে নয়, উড়িষ্যার দিকেই যাচ্ছে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’। এর ফলে চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়টির তেমন প্রভাব থাকবে না। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে এই তথ্য জানান চট্টগ্রাম আবহাওয়া ও ভূ-প্রাকৃতিক কেন্দ্রের উপ-পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ। তিনি আজাদীকে বলেন, আমরা নিশ্চিত হয়েছি, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ভারতের দিকেই যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশে আঘাত হানার সম্ভাবনা নেই। আজ বুধবার দুপুরের দিকে এটি ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গে আঘাত হানতে পারে। তবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে এর প্রভাব থাকবে। বিশেষ করে খুলনা ও সাতক্ষীরায় ঝড়ো হাওয়ার সাথে জোয়ারের পানি বাড়তে পারে।
এদিকে অন্য দিনগুলোর মতো গতকাল সকাল থেকে রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া ছিল চট্টগ্রামে। দুপুরের দিকে আকাশে ছিল সাদা মেঘের ছড়াছড়ি। তবে সাগর ছিল উত্তাল। গতকাল দুপুরের জোয়ারে অন্য সময়ের চেয়ে পানি বেশি ছিল। পূর্ণিমার কারণে পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা থাকায় দুপুরের দিকে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের অভ্যন্তরে সাগরপাড়ে মজুদ রাখা মৎস্য ব্যবসায়ীরা ব্যবহার্য জিনিসপত্র সরিয়ে নেন। তবে বাঁধ এলাকায় বসবাসকারী জেলেপল্লীতে তেমন উৎকণ্ঠা দেখা যায়নি। দুপুর সোয়া ২টার দিকে রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য বড় কাঠের টুকরো কেটে ছোট করছিলেন জেলেপত্নী কৃষ্ণা দাশ। পাশে পাড়ার ছোট ছোট ৪-৫ জন শিশু খেলাধুলা করছিল। কারো মনে ভয় নেই। কৃষ্ণা দাশ বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে বসবাস করি। ঘূর্ণিঝড় আসলে রাস্তার উপরে উঠে যাই। এখানে কারো মাঝে আতংক নেই।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় সতর্কবার্তা বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (নং-১৩) বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আরো উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে আজ বুধবার দুপুর নাগাদ উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮০-১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৬ ফুট অধিক উচ্চতার জোয়ারে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদে আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের গতকাল সন্ধ্যা ৬টার স্থানীয় পূর্বাভাসে বলা হয়, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে অস্থায়ী দমকা ঝড়ো হাওয়াসহ অনেক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিম দিক হতে ঘণ্টায় ১২-১৮ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ীভাবে দমকা কিংবা ঝড়ো হওয়া আকারে ৫০-৬০ কিলোমিটার বা তারও অধিক বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘণ্টায় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস ১৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।
গতকাল চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত এবং চট্টগ্রাম নদী বন্দরকে ২ নং নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে এক হাজার আশ্রয়কেন্দ্র
পরবর্তী নিবন্ধসুরক্ষা কীভাবে?