শেষ হচ্ছে আরেকটি শিক্ষাবর্ষ। আর ক’দিন পরই নতুন বছর। নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, আর নতুন বইয়ের উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। উৎসব আমেজে নতুন বই হাতে পাওয়ার লোভে বছরের প্রথম দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সারাদেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। যেন শুধুই নতুন বছরের প্রথম দিনের ক্ষণ গণনা। ওই দিন দেশজুড়ে চলবে বই উৎসব। নতুন বই হাতে নিয়ে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনবে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যাবে শিক্ষক–অভিভাবকদেরও। তবে এবার বছরের প্রথম দিনের বই উৎসবে প্রাথমিকের সব বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামে। কারণ এখন (২৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মোট চাহিদার মাত্র ২২ শতাংশ বই পৌঁছেছে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। অথচ নতুন বছরের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। হিসেবে এখনো ৭৮ শতাংশ বই পৌঁছেনি। এর মধ্যে প্রাক–প্রাথমিক, ১ম ও ২য় শ্রেণির একটি বইও আসেনি বলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী– চট্টগ্রাম জেলার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৩ সালের সম্ভাব্য চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত মোট বইয়ের সংখ্যা ৪৫ লাখের কিছু বেশি (৪৫ লাখ ২২ হাজার ১০৯টি)। তবে গতকাল (২৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এর মধ্যে প্রায় দশ লাখ (৯ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৩ টি) বই পাওয়া গেছে। হিসেবে প্রাথমিকের প্রায় ৩৫ লাখ বই এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অবশ্য ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বেশির ভাগ বই চলে আসবে বলে আশাবাদ চট্টগ্রামের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলামের। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দাবি– এখনো ৫/৬ দিন হাতে আছে। প্রতিদিনই কিন্তু বই আসছে। শুক্র–শনিবারও বেশ কয়টি উপজেলায় এসেছে। এখন যে হারে আসছে, তা অব্যাহত থাকলে ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রায় বই পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর ৬টি থানা ও ১৫টি উপজেলাসহ চট্টগ্রাম জেলায় প্রাথমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৫৩টি। এর মধ্যে জাতীয়করণকৃতসহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২ হাজার ২৬৯টি, বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন (কেজি স্কুল) ১ হাজার ৬৭৭টি, এনজিও স্কুল ১৩৩টি,
উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন ১২৯টি, আনরেজিস্ট্রার্ড স্কুল ১৪টি, পরীক্ষণ স্কুল ২টি, কেজি স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম) ৮৮টি এবং অন্যান্য ৪১টি স্কুল রয়েছে। সবমিলিয়ে জেলার ৪ হাজার ৩৫৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক–প্রাথমিকের ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৬ জনসহ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ৮২ হাজার ৮১০ জন। এসব শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৩ সালের সম্ভাব্য চাহিদার ভিত্তিতে বরাদ্দকৃত মোট বইয়ের সংখ্যা ৪৫ লাখ ২২ হাজার ১০৯টি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাথমিক শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর অক্টোবরের দিকে স্কুলগুলোতে বই আসা শুরু হয়। ছাপাখানা থেকে বইগুলো সরাসরি উপজেলা পর্যায়ের গোডাউনে পৌঁছে দেয়া হয়। পরবর্তীতে গোডাউন থেকে বইগুলো স্কুল পর্যায়ে হস্তান্তর করা হয়ে থাকে। তবে এবার নভেম্বরের শেষ দিকেও
ছাপাখানাগুলো কোনো বই সরবরাহ দিতে পারেনি। যদিও ডিসেম্বর থেকে উপজেলাগুলোতে বই সরবরাহ শুরু হয়। চট্টগ্রামের ২১টি থানা/উপজেলার মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১২টি থানা/উপজেলায় কিছু কিছু বই পৌঁছেছে। তাও ৩০ থেকে ৪১ শতাংশ বই পাওয়া গেছে। বাকি ৯টি থানা/উপজেলায় একটি বইও এখনো আসেনি। এ তথ্য নিশ্চিত করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, বেশ কিছু থানা/উপজেলায় এখনো বই পাওয়া যায়নি। তাছাড়া প্রাক–প্রাথমিক, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোনো বই আসেনি। যদিও কয়েকদিনের মধ্যেই এসব বই পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশের পাশাপাশি চট্টগ্রামের দুটি এবং নোয়াখালীর একটি ছাপাখানায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজ চলছে।
ছাপাখানাগুলোতে বই মুদ্রণের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও পরিদর্শনে আলাদা কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানা শিক্ষা কর্মকর্তা ও সহকারী থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত এ কমিটি প্রায় প্রতিদিনই ছাপাখানা পরিদর্শন করছে। বই সরবরাহের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে শনিবারও একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম।