নগরীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথে গাড়ি চলাচল ঝুঁকির সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সিএনজি টেক্সি এবং নিষিদ্ধ মোটরসাইকেলের পাশাপাশি প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের বেপরোয়া চলাচল লালখান বাজার–পতেঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বিক্ষিপ্তভাবে অনেকগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ হলেও ‘নানা পরিচয়ে গায়ের জোরে’ বাইক চালকেরা এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করছেন। নগরবাসীর সুবিধার জন্য পতেঙ্গা থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে বন্দরের নিমতলায় নামার পথটি খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেপরোয়া গাড়ির দাপটের কারণে সিডিএ আজ রোববার থেকে এই সুযোগ বন্ধ করে দিচ্ছে। অবৈধভাবে চলাচলকারী মোটরসাইকেলের ব্যাপারে পুলিশ আজ থেকে কঠোর অ্যাকশনে যাবে বলেও জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নগরীর যান চলাচলে গতি আনতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার লম্বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়। সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পটিতে অনুদান হিসেবে ৩ হাজার ৭শ কোটি টাকা এবং ঋণ হিসেবে ৫২৪ কোটি টাকা প্রদান করে সরকার। ঋণ হিসেবে নেওয়া টাকা সরকারকে আবার পরিশোধ করতে হবে। সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ের টোল থেকে সরকারের ঋণের টাকা পরিশোধ করবে।
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত যান চলাচল শুরু হয় কয়েক মাস আগে। টোল পরিশোধের মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েক হাজার সিএনজি টেক্সিসহ অসংখ্য গাড়ি এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করছে, যা নিচের রাস্তার উপর গাড়ির চাপ অনেকটা কমিয়েছে। নগরীর কেন্দ্র থেকে ২০ মিনিটে বিমানবন্দরসহ পতেঙ্গা এলাকায় পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ খুশি।
সরকার এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ ধরনের গাড়ি চলাচলের অনুমোদন দিয়ে টোল হার নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে মোটরসাইকেল ও কন্টেনার ট্রেইলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন গাড়ি টোল পরিশোধ করে চলাচল করছে। র্যাম্প নির্মিত না হওয়ায় শুরুতে লালখান বাজার থেকে উঠে পতেঙ্গা ছাড়া অন্য কোথাও নামার সুযোগ ছিল না। তবে মানুষের সুবিধার কথা চিন্তা করে কিছুদিন আগে পতেঙ্গা থেকে উঠে নিমতলায় নামা এবং নিমতলা থেকে উঠে লালখান বাজারে নামার দুটি র্যাম্প খুলে দেয় সিডিএ। শুরুতে কয়েকদিন ভালো থাকলেও পরে লালখান বাজার থেকে নিমতলা পর্যন্ত এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। লালখান বাজার ও নিমতলা র্যাম্প ব্যবহার করে রাতে–দিনে শত শত টেক্সি, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং মাইক্রোবাস উল্টো পথে চলাচল শুরু করে। তারা লালখান বাজার থেকে রং সাইডে উঠে অন্তত ১০ কিলোমিটার পথ রং সাইডে চালিয়ে নিমতলায় গিয়ে ওঠার র্যাম্প ব্যবহার করে উল্টো পথে নেমে যাচ্ছে। টোল না দিয়ে চলাচল করছে শত শত গাড়ি।
টোলের চেয়ে বড় বিষয় হয়ে দেখা দেয় ঝুঁকি। উল্টো পথের অবৈধ চলাচল পুরো এক্সপ্রেসওয়েকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এক্সপ্রেসওয়ের মাঝখানে ডিভাইডার থাকায় বিপরীত দিকের কোনো গাড়ি সামনে আসবে না–এমন মাইন্ডসেট নিয়ে চালকেরা গাড়ি চালান। সেখানে হুট করে সামনে গাড়ি এসে পড়লে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে অনেকগুলো অঘটনও ঘটেছে। গতকাল এক নেভি অফিসারের গাড়ি অল্পের জন্য রং সাইডে আসা একটি গাড়ি থেকে রক্ষা পেয়েছে। সিএনজি টেক্সির সাথে সিএনজি টেক্সির ধাক্কার ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছেন।
র্যাম্পে যাতে উল্টো পথে গাড়ি উঠতে না পারে সেজন্য সিডিএ এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের পাহারাদার রয়েছে। কিন্তু বাইক চালকেরা নিজেদের কখনো সাংবাদিক, কখনো পুলিশ, কখনো অন্য কোনো সংস্থার পরিচয় দিয়ে উল্টো পথে র্যাম্পে উঠেন। অনেক সময় পাহারাদারদের হুমকি ধমকি দিয়েও বাইক চালকেরা র্যাম্প ধরে উঠে যান। উল্টো পথের গাড়িগুলোও একইভাবে ক্ষমতা দেখিয়ে র্যাম্পে উঠে উল্টো পথ ধরে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করে।
সিডিএ বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে। তবে কিছুতেই অবৈধ চলাচল বন্ধ করতে না পারায় সিডিএ আজ থেকে নিমতলার র্যাম্প বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন শুধুমাত্র লালখান বাজার থেকে উঠে পতেঙ্গায় গিয়ে কিংবা পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজারে এসে নামা যাবে।
প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান আজাদীকে বলেন, মানুষের সুবিধার জন্য র্যাম্প দুটি চালু করেছিলাম। কিন্তু কিছু অবিবেচক মানুষের মিসইউজের কারণে তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। তিনি বলেন, এভাবে উল্টো পথে গাড়ি চলতে দিলে যেকোনো সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টো পথে গাড়ি চালানো মানেই জীবন হাতে নিয়ে চলাচল। পুরোপুরি নিরাপদ পরিবেশ তৈরির পরই কেবল নিমতলা র্যাম্প চালু করা হবে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে মোটরসাইকেল এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে। বিভিন্ন সময়ে অনেক মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি, আটক করেছি। কিন্তু তবুও বহু মোটরসাইকেল এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে যায়। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ। আজ থেকে বিষয়টি কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্টো পথে গাড়ি ওঠার ব্যাপারটিও পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করবে।