উপস্থিতির হার বেশি পাহাড়ে সবচেয়ে কম কক্সবাজারে

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৫৯ পূর্বাহ্ণ

করোনা সংক্রমণজনিত কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। খোলার পর থেকে গত ১০ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাসে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে ফিরে এলেও এখনো ফেরেনি অনেকে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো ক্লাসে অনুপস্থিত। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পার্বত্য তিন জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম উপস্থিতি কক্সবাজার জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। মাউশি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী-সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খাগড়াছড়ি জেলায়। মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাসে উপস্থিতি রয়েছে এই জেলায়। এ জেলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬১ হাজার ৬২৮ জন। এর মাঝে ৫৮ হাজার ৫১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকছে। হিসেবে মাত্র ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুপস্থিত। খাগড়াছড়ির পরই বেশি শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রাঙ্গামাটি জেলায়। এ জেলার মোট ৭২ হাজার ৬৯৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত থাকছে ৬৪ হাজার ৯৮০ শিক্ষার্থী। হিসেবে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে। আর অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর হার ১০ শতাংশ। উপস্থিতির ক্ষেত্রে ৩য় অবস্থানে বান্দরবান জেলা। এ জেলার ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। এ জেলার মোট ৩৩ হাজার ৩৮৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ক্লাসে উপস্থিত থাকছে ২৬ হাজার ৭০১ জন। চট্টগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৮ জন। এর মাঝে ক্লাসে উপস্থিত থাকছে ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৯২ জন। হিসেবে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। তবে আরো ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী এখনো ক্লাসে ফেরেনি।
এদিকে, সবচেয়ে কম উপস্থিতি কঙবাজার জেলায়। এ জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি রয়েছে। আর অনুপস্থিত রয়েছে আরো ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। কক্সবাজার জেলার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৪৩ হাজার ৯০৯ জন। এর মাঝে ক্লাসে উপস্থিত থাকছে ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৬৭ জন।
এখনো পুরোদমে ক্লাস শুরু না হওয়ায় উপস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানান মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) দেবব্রত দাশ। তিনি বলেন, বেশ কয়টি শ্রেণীর সপ্তাহে একদিন মাত্র ক্লাস। একদিনের উপস্থিতি দিয়ে এসব ক্লাসের উপস্থিতির প্রকৃত চিত্র পাওয়াটা কঠিন। তবে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে ফেরেনি স্বীকার করে দেবব্রত দাশ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেকে পরিবারের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হয়ে গেছে। তারা পরিবারকে সাহায্য করার পথ বেছে নিয়েছে। স্কুল খুললেও তারা আর ফেরেনি। বিশেষ করে আর্থিক ভাবে দুর্বল পরিবারের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে থাকতে পারে। আবার দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় কোথাও কোথাও মেয়েদের বিয়েও হয়ে গেছে। টুকটাক এসব কারণে কিছু শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে। তবে অনুপস্থিত সকল শিক্ষার্থী ঝরে গেছে, তা বলা যাবেনা। অনুপস্থিতদের অনেকেই হয়তো আবার ক্লাসে ফিরে আসতে পারে।
অবশ্য, জেলার অনুপস্থিত ২০ শতাংশের অর্ধেক শিক্ষার্থী হয়তো ঝরে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বান্দরবানের জেলা শিক্ষা অফিসার সরিৎ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, দুর্গম এলাকায় বসবাসের কারণে অনেকেই এখনো স্কুলে আসছে না। পারিবারিক আর্থিক অক্ষমতার কারণেও অনেকের পড়ালেখা বন্ধের পথে। আবার মেয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকের বিয়ের কথা শোনা গেছে। সবমিলিয়ে ১০ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী ঝরে পড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচার কোটি টাকার আফিমসহ নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক
পরবর্তী নিবন্ধনগর পুলিশের ডিসিসহ পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ৭ কর্মকর্তার বদলি