উপসর্গ নেই, নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ

নেগেটিভের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্ত ৫ শতাংশ বিদেশযাত্রী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় প্রায় প্রতিদিনই বিদেশযাত্রীদের একটি অংশের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ওই যাত্রী আর বিমানে ওঠার সুযোগ পান না। এতে করে সময়ের পাশাপাশি গচ্ছা যাচ্ছে বিমানের টিকিটের দামও। অথচ ফ্লাইটের নির্ধারিত সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগে নমুনা পরীক্ষা করাতে হয় বিদেশগামী এসব যাত্রীকে। পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই কেবল বিমানবন্দরের পথে পা রাখার সুযোগ পান তারা।
নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরেক দফায় নমুনা পরীক্ষায় যাত্রীদের একটি অংশের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু করোনা শনাক্ত যাত্রীদের অধিকাংশের শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না। এটি (উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত) সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য অ্যালার্মিং হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আক্রান্ত নিজেই জানেন না, তিনি নীরবে ভাইরাসের বাহক। যার কারণে তার মাধ্যমে সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।
চট্টগ্রামে এই কয়দিনে সংক্রমণের যে ঊর্ধ্বগতি, তা মূলত এই কারণেই বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলছেন, বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় প্রায় ৫ শতাংশ বিদেশযাত্রীর করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু তাদের বেশিরভাগেরই শরীরে কোনো উপসর্গ নেই। আবার তারা ২৪ ঘণ্টা আগের নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেছেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নমুনা পরীক্ষায় অনেকের শরীরে করোনা ধরা পড়ছে। সে হিসেবে বলা যায়, নেগেটিভ রিপোর্ট পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি আমাদের জন্য, চট্টগ্রামের জন্য অ্যালার্মিং। বিদেশ যাত্রীর বাইরে অন্য অনেকেরও করোনা ধরা পড়ছে, যাদের শরীরে কোনো উপসর্গ বা লক্ষণ নেই। এই নীরব ভাইরাস বহনকারীরাই ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ। এর মাঝে সামাজিকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিভিল সার্জন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ জানুয়ারি থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দরে আরটিপিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ৭৭ জন বিদেশযাত্রীর নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ৫ জানুয়ারি শনাক্ত হয় আরো একজনের। ১২ জানুয়ারি ৬ জনের, ১৩ জানুয়ারি ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৪ জানুয়ারি শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা কমে ৫ জনে দাঁড়ায়। তবে ১৫ জানুয়ারি ১৫ জন বিদেশযাত্রীর শরীরে করোনা ধরা পড়ে বিমানবন্দরের নমুনা পরীক্ষায়। সর্বশেষ গতকাল ১৯ জন বিদেশযাত্রীর করোনা ধরা পড়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন। বিমানবন্দরের নমুনা পরীক্ষায় বিদেশযাত্রীদের প্রায় ৫ শতাংশের শরীরে করোনা শনাক্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, শেষ ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৫৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। মোট ১ হাজার ৯৮৩টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ও শনাক্তের এই হার আগের দিনের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। ১ জানুয়ারি মাত্র ৯ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। শনাক্তের হার ছিল ০.৬০ শতাংশ।
সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতিকে উদ্বেগজনক বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। তবে এরপরও মাস্ক পরায় মানুষের অনীহা দেখছেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। তিনি বলেন, মানুষ বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করছেন। টিকা গ্রহীতারা যেন আরো বেশি বেপরোয়া। তারা ভাবছেন, টিকা নেয়ায় তারা আর আক্রান্ত হবেন না। যার কারণে তারা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মুখে মাস্কও রাখছেন না। অন্তত ১০ শতাংশ মানুষ মুখে মাস্ক পরছেন না, যা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন সিভিল সার্জন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতৈমুর কাকার কথাও শুনব : আইভী
পরবর্তী নিবন্ধদেশে এক দিনে রোগী বাড়ল ৫১ শতাংশ