উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার জালিয়াতি ধরা পড়ল যেভাবে

৩৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ফেরত

টেকনাফ প্রতিনিধি | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকার উত্তোলন ঠেকিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের জালিয়াতি রুখে দিয়েছেন সোনালী ব্যাংক টেকনাফ শাখার ব্যবস্থাপক আবুল মনজুর। শুধু তাই নয়, উক্ত ব্যাংক কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার বাদী হয়ে মামলা করায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেই কর্মকর্তাসহ জালিয়াতির সাথে জড়িত তিনজন। পলাতক অন্য দুজন হচ্ছেন অভিযুুক্ত সাহাব উদ্দীন ও আবুল বশর। সাহাব উদ্দীন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার ভাই। অপরজন টেকনাফ হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিট কর্মকর্তা।
গতকাল বিকালে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান। জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ গত ২৯ জুন ভুয়া বিল ভাউচার দিয়ে পেনশনের নামে আপন ভাই সাহাব উদ্দীনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকার দুটি চেকে অ্যাডভাইস পাঠান। পরে বিভিন্নভাবে অনুসন্ধান চালিয়ে উক্ত অ্যাডভাইসটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় গতকাল সকালে সোনালী ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ওই টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয় টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখা।
ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল মনজুর জানান, শাহ নেওয়াজের পাঠানো পেনশনের অ্যাডভাইস ও বিলের ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮২ টাকা চট্টগ্রামের একটি শাখায় পাঠানো হয়েছিল। পরে সন্দেহ হলে তা যাচাই-বাছাইয়ে ভুয়া প্রমাণিত হয়। ভুয়া বিলের ওই টাকা ফেরত আনা হয়েছে। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা টাকা আত্মসাৎ করতে এমনটি করেছেন।
জানা যায়, টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজ কৌশলে গত ২২ জুন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের সাহাব উদ্দীন নামে একজনকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাজিয়ে দুটি পেনশন বিলের ৩৩ লাখ ৬১ হাজার টাকার অ্যাডভাইস ও বিল তৈরি করেন। এর মধ্যে আনুতোষিক বিল ফরমে ৩১ লাখ ৯১ হাজার ৯৪০ টাকা এবং পেনশন পেমেন্ট অর্ডার (পিপিও) ফরমে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪২ টাকা রয়েছে। এই অ্যাডভাইস ও বিল গত ২৯ জুন টেকনাফ সোনালী ব্যাংক শাখায় পাঠানো হয়। এ সময় অ্যাডভাইস ও বিলের হার্ড ও সফট কপি ব্যাংকে জমা দিয়ে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখার সাহাব উদ্দীনের হিসাব নম্বরে জমা করতে বলা হয়।
অ্যাডভাইস ও বিল মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই টাকা সাহাব উদ্দীনের হিসাবে জমা দেয়। পরে ৪ জুলাই পেনশন বিল নিয়ে সন্দেহ হলে সোনালী ব্যাংক টেকনাফ শাখা কর্তৃপক্ষ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পাঠানো তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু করে।
এতেই বেরিয়ে আসে আসল ঘটনা। বেনিফিসিয়ারি, হিসাবরক্ষণ অফিস, প্রাণিসম্পদ অফিস ও চট্টগ্রামে ব্যাংকে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হন, বিলটি ভুয়া এবং সাহাব উদ্দীন নামে কোনও সরকারি কর্মকর্তা অবসরে যাননি। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগ্রাবাদ কর্পোরেট শাখা থেকে পেনশন বিলের ওই টাকা উত্তোলন বন্ধ করে টেকনাফ শাখায় ফেরত আনে।
কঙবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসীম বরণ সেন বলেন, একজনকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাজিয়ে পেনশনের নামে বানানো বিল ভাউচারের সবগুলো ভুয়া। এই নামে আমাদের জেলায় কোনও পেনশনভোগী নেই। ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এই টাকা আত্মসাৎ করতে চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা শাহ নেওয়াজের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী বলেন, ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে পেনশনের টাকা আত্মসাৎ চেষ্টার বিষয়টি শুনেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওয়ার্ডবয় থেকে নিউরো বিশেষজ্ঞ
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে নগদায়ন হয়নি ৫শ কোটি টাকার চেক