লোহাগাড়ায় চুনতির ব্যস্ত এলাকা ডাকবাংলো সড়কে চলমান উন্নয়ন কাজ দীর্ঘদিন ধরে অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে আশপাশের এলাকার লোকজনসহ ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন দুর্ভোগের মাঝে যাতায়াত করতে বাধ্য হচ্ছে। চলাচলের অযোগ্য কাঁচা রাস্তা, কাদা পানি আর ধুলোবালির কারণে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সড়ক দিয়ে চুনতি সরকারি মহিলা কলেজ, চুনতি উচ্চ বিদ্যালয়, চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদরাসা, চুনতি ফাতেমা বতুল মহিলা মাদরাসা ও চুনতি হাকিমিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ আশপাশের এলাকার লোকজন চলাচল করেন। কয়েক মাস আগে শুরু হওয়া সড়ক সংস্কার কাজ হঠাৎ করে থেমে যায়। রাস্তাটি খনন করার পর আর পিচ ঢালাই বা সলিংয়ের কাজ হয়নি। যার ফলে রাস্তায় একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে। এতে বৃষ্টির পানিতে রাস্তা কাদায় পরিণত হয়। আর শুকনা দিনে ধুলোবালিতে দম বন্ধ হয়ে আসে পথচারীদের। কেউ এ বিষয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা দ্রুত সড়ক সংস্কার কাজ শেষে করে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা যায়, চুনতি ডাকবাংলো সড়কটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৭০ মিটার। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯৫৭ টাকা ব্যয়ে উক্ত সড়ক সংস্কার কাজের দায়িত্ব পায় নিপা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে চুনতি সীরত ময়দানে ১৯ দিন ব্যাপী ৫৫তম আন্তর্জাতিক সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিল চলমান। মাহফিলে যাতায়াতের জন্য ডাকবাংলো সড়ক ব্যবহৃত হয়। কয়েকদিন আগে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে জামায়াতে ইসলামী চুনতি ইউনিয়ন শাখার উদ্যোগে সড়কের বড় গর্তগুলো কংক্রিট দিয়ে ভরাট করা হয়। স্থানীয়রা সিডিউল অনুযায়ী সড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানিয়েছেন।
আহমদ কবির নামে এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী চলাচল করে। নিজের সন্তানকে প্রতিদিন কলেজে পৌঁছে দিতে হয়। কিন্তু সড়কের অবস্থা এত নাজুক মোটরসাইকেল চলাচল দূরের কথা, হেঁটে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে।
চুনতি ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, এলজিইডির প্রকল্পের আওতায় সড়কটির কাজ হচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদার ঠিকভাবে কাজ না করায় শিক্ষার্থীসহ স্থানীয়দের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীকে অবহিত করেছি।
চুনতি সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাফর আলম বলেন, বর্ষা মৌসুমে ঠিকাদার কাজ শুরু করেন। কিন্তু টানা কাজ করে সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেননি। অর্ধেক কাজ করে ফেলে রেখেছেন। জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও তদারকির অভাবে সড়কটি উন্নয়নের চেয়ে দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
লোহাগাড়া উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ইফরাত বিন মুনীর বলেন, সড়কের কাজ বর্ষার আগেই শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাজেট ছাড় ও দরপত্র প্রক্রিয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। এছাড়া অর্ধেক কাজ করা অবস্থায় সড়কের ঠিকাদার মারা গেছেন। এখন নিয়মিত তদারকি চলছে। যত দ্রুত সম্ভব সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করে চলাচলের উপযোগী করা হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ডাকবাংলো সড়কের দুরবস্থার বিষয়ে অবগত হয়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যেন নিরাপদে চলাচল করতে পারে, সেটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।