আগ্রাবাদে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে ‘দোষারোপ’ করে সিডিএ’র দায়িত্বশীলদের দেয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ জন্য সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসকে দায়ী করেছেন মেয়র। গতকাল অনুষ্ঠিত চসিকের বর্তমান পর্ষদের ৮ম সাধারণ সভা থেকে এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা থেকে কয়েকজন কাউন্সিলরও সিডিএ’র বক্তব্যেকে উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং নিন্দা জানিয়েছেন। আন্দরকিল্লাস্থ নগর ভবনের কে.বি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে এ সভা হয়েছে।
সভায় সেবাসংস্থাগুলোর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সমন্বয় নিশ্চিতে সিটি মেয়রকে নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, সমন্বয়ের অভিভাবকত্ব মেয়রকে দিতে হবে। সরকারের মেগাপ্রকল্পসহ যে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সে ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার কারণে নাগরিক দুর্ভোগ ও সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা নিরসনে সরকারের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে পরপর যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে কষ্ট পেলেও তা লাঘবে আমার ক্ষমতা খুবই সীমিত। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান বা নির্বাহকারক প্রতিনিধিগণ সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও তার দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা প্রদানের আওতা বহির্ভূত। এক্ষেত্রে চসিক মেয়র হিসেবে সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার বিধিসম্মতভাবে দেয়া অতীব প্রয়োজন বলে মনে করি।
সভায় মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, সিডিএ’র একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী চসিকের প্রতি দোষারোপ করে যে সকল বিদ্বেষমূলক উক্তি গণমাধ্যমে প্রকাশ করছেন তাতে আন্ত: সংস্থা (সিডিএ ও চসিক) বিরোধ সৃষ্টি করার অপপ্রয়াস বলে মনে করি। এ কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই প্রশ্ন জাগে ঐ প্রকৌশলী কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে?
উল্লেখ্য, গত ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ নালায় পড়ে সাদিয়ার মৃত্যুর ঘটনার পর নালার পারে বেষ্টনি না দেয়ার জন্য সিডিএকে দোষারোপ করেন মেয়র। পরে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন, প্রতি বছর কোনো না কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে। ড্রেনে হয় মানুষ পড়ে, নয়তো গাড়ি। গত ৩০ বছর ধরে এটা চলে আসছে। তখন তো সিডিএ’র খালের প্রজেক্ট ছিল না। তখন তারা (চসিক) খাল-নালায় কোনো ব্যারিয়ার দেয়নি কেন?’
সধারণ সভার বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, সিডিএ যে মানুষের কাছে ভুল তথ্য পরিবেশন করছে সেটা ঠিক না, এ জন্য সবাই নিন্দা প্রকাশ করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের উপর দোষ চাপায় নিজেকে পরিষ্কার রাখার জন্য তারা জনগণকে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিচ্ছে। মুরাদপুরের ঘটনা, পরশু একজন মারা গেল। সেখানে তো মেইটেনেন্স তাদের দায়িত্ব। তারা ফুটপাত কেটে দেড়ফুটে নিয়ে আসে। দেড়ফুটের ফুটপাতে কি মানুষ হাঁটতে পারে। এ বিষয়ে জানার জন্য সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামসের মুঠোফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেন নি।
সাধারণ সভায় মেয়র সিডিএ’র উদ্দেশ্যে বলেন, সমুদ্রে যখন জাহাজ চলে তা যদি নাবিকের অসর্তকতার কারণে দুর্ঘটনা কবলিত হয় তা তো সমুদ্রের দোষ হতে পারে না। অনুরূপ যারা মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তারা জননিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করতে না পারলে তা প্রকল্পের দোষ নয়।
তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যা ও জনভোগান্তিগুলোকে চিহ্নিত করে তা সমাধানে চসিক ও সিডিএ প্রকৌশলী পর্যায়ে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হয়েছিলো। এই কমিটি সরজমিনে গিয়ে সমস্যা শনাক্ত করলেও বাস্তব ক্ষেত্রে সমাধানের কোন প্রতিফলন দেখা যায় নি। আরো উদ্বেগজনক হলো, যেখানে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেখানে নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকায় প্রতিনিয়তই দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটছে।
মেয়র নির্বাচিত কাউন্সিলরদের ওয়ার্ডে চসিকসহ যে সকল সেবাসংস্থাগুলো কাজ করবে তাদেরকে সে কাজ সম্পর্কে আগে-ভাগে অবগত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের মালিক হচ্ছে জনগণ, সাংবিধানিকভাবে এই সত্যটি সুস্পষ্ট, সে কারণে রাষ্ট্রের সম্পদ জনগণের নিরাপত্তা দেখভাল করা দায়িত্ব জনপ্রতিনিধি হিসেবে তাদের উপর বর্তায়।
মেয়র নগরের যে সকল রাস্তা ও অলিগলি অতিবৃষ্টির কারণে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে তা প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে মেরামত ও বর্জ্য অপসারণের কাজগুলোও রাতের বেলায় সম্পাদন করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করেন। এছাড়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অব্যাহত রাখার কথা পুনঃব্যক্ত করেন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন আশ্বস্ত করেন। চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় প্যানেল মেয়র আব্দুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকসহ চসিক কাউন্সিলর, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও বিভাগীয় কর্মকর্তারগণ বক্তব্য রাখেন।












