উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা পালন করতে হবে

বাড়াতে হবে কাজে গতি

| বুধবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রাণঘাতী মহামারি কোভিড-১৯ পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই নির্দেশনা প্রদান করেন। গতকাল ২৩ নভেম্বর দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথাটি বলেন। তিনি বলেন, যেহেতু কোভিড সংক্রমণের দুবছর হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের একটা প্রোটোকলও ডেভেলপ হয়ে গেছে। সুতরাং, সবাইকে আরেকটু জোরেশোরে কাজ করে আমাদের ব্যাকলক যদি থাকে সেটা ডেভেলপমেন্ট ফেইজটা আগের মতো নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় দেয়া বিধি-নিষেধ এখনও কিছু কিছু রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গভবনে এবার ১৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রোগ্রাম হবে, কারণ সেখানে অবাধ মেলামেশা হবে না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ৩২টি জেলার সঙ্গে মিটিং করে ফেলেছি। তাদের বলেছি, কমফোর্ট ও রিল্যাক্স হওয়ার কোন সুযোগ নেই। সবাইকে মনোযোগী থাকতে হবে এবং সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোপূর্বে বলেছেন, মহামারির কারণে উন্নয়নের গতি কিছুটা কমে গেলেও দেশ থেমে থাকেনি, এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, স্বল্প আয়তনের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশের রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। সরকার কৃষিখাতসহ অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তাঁরা বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট খাতের অবদানের ওপর নির্ভরশীল নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় অর্থনীতির সকল খাতের সামগ্রিক অগ্রগতি ও অবদান। উৎপাদনশীলতার সুফল শুধুমাত্র উৎপাদনকারী এককভাবে ভোগ করে না। তার সুফল সরকার, মালিক, শ্রমিক ও ভোক্তাসহ সমাজের সবাই সমানভাবে ভোগ করে। তাই এর সুফল ভোগ করতে সমাজের সকলের স্বত:স্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং অঙ্গীকার একান্ত প্রয়োজন। আর এই সামগ্রিক অঙ্গীকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একমাত্র পথ হচ্ছে উৎপাদনশীলতা উন্নয়ন কর্মসূচিকে জাতীয় আন্দোলনে রূপান্তরিত করা।
উৎপাদনশীলতার স্তরে আমাদের কিছুটা পিছিয়ে থাকা প্রসঙ্গে তাঁরা বলেন, এ অবস্থা থেকে আমাদেরকে দ্রুত উত্তরণ করতে হলে দেশের কৃষি, শিল্প কারখানা, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতাল প্রভৃতি জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকাণ্ডের পদ্ধতিগত ও ধারাবাহিকভাবে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কর্মসূচিকে আরও জোরদার করতে হবে। সবাইকে উৎপাদনশীলতার সুফল সম্পর্কে সচেতন এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির আন্দোলনে সবাইকে শামিল করতে হবে।
একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার দৃশ্যমান দিক হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও জীবনমানের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করা যায়। গত এক দশকে বাংলাদেশের এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। বড়ো বড়ো প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অল্প দিনের মধ্যেই চালু হবে বাংলাদেশের জনমানুষের বহুকাক্সিক্ষত পদ্মাসেতু। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের সফলতা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে একটি মাইলফলক। এছাড়া রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশে আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এসব অবকাঠামো যথাসময়ে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে আরো এগিয়ে যাবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, দীর্ঘমেয়াদি যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট মানসম্পন্ন। এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে কোন বিষয়গুলোকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব। সরকারি খাতের বিনিয়োগ বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বেসরকারি খাতকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যাতে মূল লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বছর শেষে প্রকল্পের পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের কাজে জোর দিতে হবে। একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি ভালো ফল পাওয়া যায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালককে পুরস্কৃত করা যেতে পারে। একইভাবে কোনো প্রকল্প যদি ভালোভাবে কাজ না করে, তাহলে সেটা কেন ভালো করল না, সেই জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে এর সুফল বেসরকারি খাতও পাবে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়নে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে সকল কাজে গতি আনতে হবে। তা না হলে সামঞ্জস্যপূর্ণ টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে, এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সব সেক্টরে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে