উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ লুটপাট : শ্বেতপত্র কমিটি

‘আমাদের কাজ চোর ধরা নয়, আমরা চুরির বর্ণনা দিয়েছি’ । এখন দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে

| মঙ্গলবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে উন্নয়ন বাজেটের ৪০ শতাংশ অর্থ ‘তছরুপ’ বা ‘লুটপাট’ হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে দেশের অর্থনীতির হালচাল জানার জন্য গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। এ অর্থ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা এক লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে ‘পাচার’ হয়েছে বলেও কমিটির পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছে।

কমিটি গঠনের তিন মাসের মাথায় গত রোববার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র তুলে দেন কমিটির প্রধান অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। গতকাল সোমবার সেই প্রতিবেদনের বিষয়ে জানাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কমিটির সদস্যরা। খবর বিডিনিউজের।

কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘অতিরঞ্জিত তথ্যের ভিত্তিতে একটা উন্নয়ন আখ্যান’ তৈরি করা হয়েছে, যার আড়ালে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও স্বল্প সংখ্যক মানুষের হাতে অধিক পরিমাণ সম্পদ কুক্ষিগত হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ৮৫ শতাংশ সম্পদ ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন শ্বেতপত্র কমিটির প্রধান দেবপ্রিয়। তিনি বলেন, শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে প্রতিটি খাতে লুটপাট ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। আমাদের কাজ চোর ধরা নয়, আমরা চুরির বর্ণনা দিয়েছি।

দেবপ্রিয় বলেন, চামচা পুঁজিবাদ থেকে চোরতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল পুরো কাঠামো। এর উৎস ২০১৮ সালের নির্বাচন। পরবর্তী সময়ে যে ভোট হয়েছে, সেখানে স্বচ্ছতার জায়গা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা নষ্ট করা হয়েছে। জাতিসংঘ এখনো মনে করছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে কোনো বাধা নেই।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, গত ১৫ বছরে দুর্নীতি বা অনিয়ম যাই বলেন এর পেছনে রয়েছে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং উর্দিপরা ও উর্দিছাড়া আমলাগোষ্ঠী। বিগত তিনটি নির্বাচন এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সরকার ও সামাজিক শক্তি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম এমনকি বিদেশিরাও এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। বিদেশিরা অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় প্রশংসা করে সরকারকে সুরক্ষা দিয়েছে।

তিনি বলেন, এখন সংস্কার কাজের জন্য দেশে অর্থনৈতিক ও আইন শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা দরকার। সরকার গত তিনমাসে অর্থনীতি ঠিক করার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটি বিস্তারিত বিবরণ জনসম্মুখে দিতে হবে। আগামী ছয়মাসে যেসব পদক্ষেপ সরকার নেবে বলে মনে করছে তারও একটা পরিকল্পনা হাজির করতে হবে। আগামী ছয়মাসে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার মান, সুদহার কোনটা কোথায় থাকবে তার একটা ধারণা সরকারকে দিতে হবে।

দেবপ্রিয় বলেন, বর্তমান সরকার সীমিতকালীন সরকার হলেও এর সিদ্ধান্তগুলোর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে। বিনিয়োগ ও কর্সংস্থান, শিক্ষার মান, স্বাস্থ্যসেবা এসব খাতে একটি মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা এ সরকারকে দিতে হবে। সেটা দুই বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হলেও হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য ড. এ কে এনামুল হক বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৪০ শতাংশ ব্যয় তছরুপ বা লুটপাট করা হয়েছে। এটা এককভাবে ঘটেনি। সব পক্ষ মিলে ধাপে ধাপে কাজটি করেছে। কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক মেগা প্রকল্পই হয়ত প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ঠিকাদারের কথা অনুযায়ী কয়েকগুণ ব্যয় বাড়িয়ে সেই টাকা পাচার করা হয়েছে। অর্থপাচারের হিসাব বের করা বেশ কঠিন। তবে আমি একটি আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অবলম্বন করে পাচারের হিসাবটা এনেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৪ : ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে প্রতিবন্ধী জনগণকে অন্তর্ভুক্তিকরণ
পরবর্তী নিবন্ধরাউজানে সন্ত্রাসী জানে আলম গ্রেপ্তার