রাঙ্গুনিয়ায় উদ্যোমী কাজে একসময় পিছিয়ে ছিলেন নারীরা। শিক্ষিত হয়েও নারীদের ঠিকানা যেনো ছিলো রান্নাঘর। তবে দিন পাল্টেছে–উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরাও। তাদের কেউ সেলাই, মাছ চাষ, পোল্ট্রি ও গরুর খামারি, কৃষি কিংবা অনলাইনে ব্যবসায় করে সফল হয়ে সৃষ্টি করছেন উদাহরণ। তাদের এই কাজে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন এনজিও সংস্থাসহ উপজেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তর।
উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কমিউনিটি সেন্টার এলাকার বাসিন্দা হাসিনা বেগম (৪০)। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী এই নারী এখন একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পেয়েছেন। হঠাৎ প্রবাসী স্বামী মারা যাওয়ার পর চার সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সংসারের কঠিন বাস্তবতায় টিকে থাকার লড়াইয়ে নিজের উদ্যোগে কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে তার। তারপর থেকেই শুরু করেন লেয়ার মুরগি পালন।
হাসিনা বেগম জানান, প্রথমে মাত্র ৮টি মুরগি দিয়ে ঘরোয়াভাবে শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর সফলতা পাওয়ায় মুরগির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। পরে ফটিকছড়ি থেকে ক্রয় করেন আরও ৪৫০টি লেয়ার মুরগি। বর্তমানে তার খামারে প্রতিদিন গড়ে ৪২০ থেকে ৪৩০টি ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিদিন দুইবার করে ডিম সংগ্রহ করা হয়। এলাকার বিভিন্ন দোকানদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খামারে এসেই তার কাছ থেকে নিয়মিত ডিম কিনে নিয়ে যান।
হাসিনা বেগম বলেন, টাকার অভাবে বড় পরিসরে খামার গড়ে তুলতে পারিনি। তবে ঘরোয়া পরিবেশেই যতটা পারি চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি জানান, লেয়ার মুরগি সাধারণত ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে ডিম দেওয়া শুরু করে এবং বছরে গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০টি ডিম দেয়। প্রায় দুই বছর পর্যন্ত নিয়মিত ডিম দিলেও পরবর্তী সময়ে উৎপাদন কমে যায়। তখন পুরনো মুরগি বিক্রি করে নতুন মুরগি দিয়ে প্রতিস্থাপন করা উচিত। স্থানীয় আবুল কালাম জানান, নিজের সাহস, পরিশ্রম ও দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে হাসিনা বেগম এখন অনেক নারীর কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন–পরিশ্রম ও অধ্যবসায় থাকলে একজন নারীও ঘরে বসে স্বনির্ভর হতে পারেন এবং সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন।
একইভাবে পদুয়ার রেণুয়ারা বেগমসহ উপজেলার কয়েক শতাধিক নারী কৃষি কাজ করে সফল হয়েছেন। পোমরা ফেরদৌস অনলাইনে মসলা বিক্রি করে, শিলকের মেহেভিন আফরিন অনলাইনে কাপড়ের ব্যবসায় করে, বিভিন্ন নারী কেক বানিয়ে অনলাইনে বিক্রি করে সফল হয়েছেন। এছাড়া বিউটিফিকেশন, বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায় জড়িত হয়ে সফল হচ্ছেন নারীরা। এভাবে উপজেলার অন্তত শতাধিক নারী বিভিন্ন উদ্যোমী কাজে জড়িত হয়ে নিজেকে করেছেন স্বাবলম্বী এবং তাদের মাধ্যমে পরিবারগুলো হয়েছে সচ্ছল।
উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, নারীদেরকে উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করতে বিভিন্ন ট্রেনিং দেয়া হয়। বছরে অন্তত ১০০ জন নারীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সফল উদ্যোক্তা হতে দেয়া হয় প্রয়োজনীয় সহায়তা।
বেসরকারি এনজিও সংস্থা কারিতাসের মাঠ কর্মকর্তা গৌরী ভট্টাচার্য জানান, কারিতাসের মাধ্যমে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তা করা হয়। তাদের ট্রেনিং, প্রণোদনা, অনুদান দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করে সফল উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করা হয়। একইভাবে অন্যান্য আরও একাধিক এনজিও সংস্থা রয়েছে যারা নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান জানান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে ট্রেনিং ও ঋণ সহায়তা দেয়া হয়। একইভাবে মহিলা বিষয়ক দপ্তর থেকেও নারীদের সেলাইয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং সফল নারী উদ্যোক্তাদের নারী দিবসে সংবর্ধিত করা হয়। এর বাইরেও পল্লী উন্নয়ন বোর্ড এবং প্রাণীসম্পদ দপ্তর থেকেও উদ্যোমী নারীদের নানা সহায়তা করা হয়। কৃষি কাজেও রাঙ্গুনিয়ার নারীরা এগিয়ে। সবমিলিয়ে নারীদের উদ্যোম এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সহায়তায় ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা–যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে নিয়ে আসতে পারে।












