উদ্যোক্তা : জাতির অগ্রগতির মেরুদণ্ড

আনোয়ারা রিনু | বুধবার , ১ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হলো উদ্যোক্তা কার্যক্রম। উদ্যোক্তারা শুধু ব্যবসায়ী নন, তাঁরা দূরদর্শীযাঁরা সুযোগ চিহ্নিত করেন, পরিকল্পিত ঝুঁকি নেন এবং শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের জন্যও মূল্য সৃষ্টি করেন।

বিশেষ করে বাংলাদেশে গত এক দশকে উদ্যোক্তাদের উত্থান এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ঢাকার প্রযুক্তি খাতের স্টার্টআপ থেকে শুরু করে গ্রামের নারীনেতৃত্বাধীন ক্ষুদ্র উদ্যোগউদ্যোক্তা শক্তি আজ দেশের অর্থনীতিকে নতুন রূপ দিচ্ছে। এ অগ্রযাত্রায় অবদান রেখেছে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, মোবাইল ব্যাংকিং, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) খাতে সরকারি সহায়তা এবং নতুন প্রজন্মের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা।

বাংলাদেশের উদ্যোক্তাবৃত্তির সবচেয়ে অনুপ্রেরণাদায়ক দিক হলো সামাজিক উদ্যোক্তাদের উত্থান। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান মুনাফার পাশাপাশি দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ সংরক্ষণের মতো সামাজিক সমস্যা সমাধানে কাজ করছে। ফলে ব্যবসায়িক লক্ষ্য সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে মিলে গিয়ে টেকসই উন্নয়নের পথ তৈরি করছে। তবে উদ্যোক্তার পথচলা সহজ নয়। সীমিত অর্থায়ন, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক জটিলতা প্রায়ই নতুন উদ্যোগের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা যথাযথ দিকনির্দেশনা ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ না পাওয়ায় পিছিয়ে পড়েন। এ বাধা দূর করতে সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, যেন একটি সহায়ক পরিবেশ গড়ে ওঠে। শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন এখানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উদ্যোক্তাবিষয়ক কোর্স, হাতেকলমে প্রশিক্ষণ ও মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম চালু করলে তরুণ প্রজন্ম প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে পারবে। একই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহায়ক নীতি গ্রহণ করা জরুরি। নারীরা ব্যবসায় যুক্ত হলে এর সুফল সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে বলা যায়, উদ্যোক্তা হওয়া মানে শুধু মুনাফা অর্জন নয়। এটি হলো দৃঢ়তা, সৃজনশীলতা ও সাহসিকতার প্রতীক। উদ্যোক্তারা প্রমাণ করেন, দূরদৃষ্টি ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করা সম্ভব। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্ন পূরণে উদ্যোক্তারা থাকবে মূল চালিকাশক্তি। তাঁদের লালনপালন ও সহায়তা করা মানে শুধু ব্যবসা গড়ে তোলা নয়, বরং একটি আত্মনির্ভরশীল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণ করা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধক্লান্ত রাতের প্রহর
পরবর্তী নিবন্ধগুরুর মস্তক ভাঙছে শিষ্য